পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছুটি রাজকুমার চলে গেলেন। মহারানা বলতে লাগলেন, ‘প্রিয়ে, স্থির হও, ধৈর্য ধরে, বুক বাধে, মহাকালের কঠোর বিধান নতশিরে শান্ত-মনে বহন করে । তারপর রণরণ শব্দে রাজপুতের রণডঙ্কা দিগদিগন্ত কঁাপিয়ে বাজতে লাগল— যুবরাজ অরিসিংহ যুদ্ধযাত্রা করলেন ! সেইদিন থেকে একমাস কেটে গেল। পাঠানের বিরুদ্ধে রাজপুতদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হল ! একের পর এক, এগারোজন রাজকুমার যুদ্ধে প্রাণ দিলেন। আর আশা নেই, আর উপায় নেই! কিন্তু তবু রাজপুতের বীর-হৃদয় এখনো অটল রইল । চিতোরের শেষ দুই বীর, লক্ষ্মণসিংহ আর ভীমসিংহ, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। রানার হুকুমে মেবারের লক্ষ-লক্ষ সৈন্যসামন্তের অবশেষ– ভীষণমূর্তি ভগবান একলিঙ্গের দশ-হাজার দেওয়ানীফৌজ একত্র হতে লাগল। তাদের একহাতে শূল, একহাতে কুঠার, দুই কানে শখের কুণ্ডল, মাথায় কালো কুটি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গায়ে বাঘছালের অঙ্গরাখা, পিঠে একটা করে প্রকাণ্ড ঢাল । তাদের আসবাবের মধ্যে এক ঘোড়া, এক কম্বল, এক লোটা— পৃথিবীতে আপনার বলবার আর কিছুই ছিল না। তারা দেবতার মধ্যে একমাত্র একলিঙ্গজীর উপাসনা করত, মানুষের মধ্যে কেবলমাত্র মহারানার হুকুম মানত। সমরসিংহ এই ফৌজের স্বষ্টিকর্ত। ছোটোখাট যুদ্ধে এদের কেউ দেখতে পেত না ; কেবল মাঝে-মাঝে ঘোর তুর্দিনে, যখন চারিদিকে শত্রু, চারিদিকে বিপদ ঘনিয়ে আসত, যখন বিধর্মীর হাতে অপমান হবার ভয়ে দেশের যত সুন্দরী— কী কুমারী, কী বিধবা, কী দশ বছরের কচিমেয়ে, কী যোলো বছরের পূর্ণ যুবতী — চিতার আগুনে রূপফেবন ছাই করে দিয়ে, চিতোরেশ্বরীর সম্মুখে জীবনের শেষ ব্রত জহর-ব্রত উদ্‌যাপন করত, যখন আর কোনো আশা, কোনো উপায় নেই, সেই সময়, হতাশ রাজপুতের শেষউৎসাহের মতো তুর্ধর্ষ, দুর্দান্ত এই দেওয়ানী ফৌজ চিতোরের কেল্লায় দেখা দিত। সত্তর বৎসর পূর্বে সমরসিংহের বিধবা রানী কর্মদেবী సిరి