একদিন কুতুবুদ্দীনের হাত থেকে ছেলের রাজ-সিংহাসন রক্ষা করবার জন্যে মেবারের সমস্ত সৈন্য একত্র করেছিলেন ; সেইদিন একবার দেওয়ানী ফৌজের ডাক পড়েছিল, আর আজ কয় পুরুষ পরে মহারানা লক্ষ্মণসিংহের হুকুমে দেওয়ানী-ফেজ তার একবার চিতোরের কেল্লায় উপস্থিত হল। কালরাত্রি, তিথি তামাবস্যা যখন জগৎ-সংসার গ্রাস করেছিল, মাথার উপর থেকে চন্দ্রস্র্য যখন লুপ্ত হয়েছিল, সেই সময় চিতোবের মহাশ্মশানের মধ্যস্থলে চিতোরেশ্বরীর মন্দিরে বারো-হাজার রাজপুত সুন্দরীর জহর ব্রত অগ্রস্তু হল। মন্দিরের ঠিক সম্মুখে অন্ধকার একটা সুড়ঙ্গের উপর দাড়িয়ে রাজস্থানের প্রথম-সুন্দরী রানী পদ্মিনী অগ্নিদেবের স্তব আরম্ভ করলেন, ‘হে অগ্নি, হে পবিত্র উজ্জল স্বর্ণকান্তি, এসে । পুথিবীব অন্ধকার তোমার আলোয় দূরে যাক। হে অগ্নি, হে মহাতেজ, এসে ! তুমি দুর্বলের বল, সবলের সহায় । হে দেবতা, হে ভয়ংকর, আমাদের ভয় দূর করে, সন্তাপ নাশ করে, আশ্রয় দাও । লজ্জা নিবারণ, দুঃখ বিনাশন, বহ্নিশিখা, তুমি জীবনের শেষ গতি, বন্ধনের মহামুক্তি ! পদ্মিনী নীরব হলেন। বারো-হাজার রাজপুতের মেয়ে সেই অগ্নিকুণ্ডের চারিদিকে ঘুরে ঘুবে গাইতে লাগল— ‘লাজহরণ ! তাপবারণ ! হঠাৎ একসময় মত। কল্লোলে চারিদিক পরিপূর্ণ করে হাজার-হাজার আগুনের শিখা মহা আনন্দে সেই সুড়ঙ্গের মুখে ছুটে এল। প্রচণ্ড আলোয় রাত্রির অন্ধকার টলমল করে উঠল। বারোহাজার রাজপুতনীর সঙ্গে রানী পদ্মিনী অগ্নি-কুণ্ডে কাপ দিলেন— চিতোরের সমস্ত ঘরের সমস্ত সোনামুখ, মিষ্টি কথা আর মধুর হাসি নিয়ে এক-নিমেষে চিতার আগুনে ছাই হয়ে গেল ! সমস্ত রাজপুতের বুকের ভিতর হতে চিংকার উঠল— জয় মহাসতীর জয়! আল্লাউদ্দীন নিজের শিবিরে শুয়ে চিৎকার শুনতে পেলেন । তিনি তৎক্ষণাৎ সমস্ত সৈন্য প্রস্তুত রাখতে হুকুম পাঠালেন। পরদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে চিতোরের পাহাড় বেয়ে বর্ষাকালের 〉&8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।