স্রোতের মতো রাজপুত-সেনা হর-হর শব্দে দিগদিগন্ত কঁাপিয়ে ভয়ংকর তেজে পাঠান সৈন্তের উপব এসে পড়ল । আল্লাউদ্দীনের তাতার সৈন্য দেওয়ানী-ফৌজের কুঠারের মুখে নিমেষের মধ্যে ছিন্নভিন্ন, ছারখার হয়ে পলায়ন করলে। আল্লাউদ্দীন নতুন-নতুন সৈন্য এনে বারংবার রাজপুতদের বাধা দিতে লাগলেন— স্রোতের মুখে বালির বাধের মতো তার সমস্ত চেষ্ট প্রতিবার বিফল হল । আল্লাউদ্দীন নিজে একজন সামান্য বীরপুরুষ ছিলেন না ; এর চেয়ে ঢের কম সৈন্য নিয়ে তিনি মেবাবের চেয়ে অনেক বড়ো বড়ে৷ হিন্দু রাজত্ব অনায়াসে জয় করেছেন, কিন্তু আজ যুদ্ধে রাজপুতের বীরত্ব দেখে তাকে ভয় পেতে হল । বারে বার তিনি সৈন্য সাজিয়ে রাজপুতদের বাধা দিলেন, বাবে বাব তাকে হটে আসতে হল ; আল্লাউদ্দীন বেশ বুঝলেন আজ যুদ্ধের সহজে শেষ নেই । একদিকে দিল্লীর বাদশাহীর তক্ত, আর একদিকে চিতে বের রাজসি হাসন— কোনটা থাকে কোনটা যায়! তখন বেল। তৃতীয় প্রহর, আল্লাউদান নিজের সমস্ত ফৌজ একেবারে একসময়ে সেই বারো তাজাব রাজপুতের দিকে চালাতে ভ ম দিলেন । নিমেষের মধ্যে পাঠান বাদশার লক্ষ-লক্ষ হাতি-ঘোড় সেপাই-শস্ত্রা প্রলয়-ঝড়েব মতে। ধূলায়-ধূলায় চারিদিক অন্ধকার কবে দীন-দান শব্দে বাজপুতের দিকে ছুটে আসতে লাগল। তাবপর হঠাৎ একসময়, সমুদ্রের তরঙ্গে নদীব জল যেমন, তেমনি সেই অগণিত পাঠান সৈন্ত্যেব মাঝে কয়েক হাজবি রাজপুত কোনখানে লুপ্ত হল, কিছু আর দেখা গেল না। কেবল সূর্যাস্তের কিছু পূর্বে সেই যুদ্ধরত অসখ্য সৈন্তের মাথাব উপরে সূর্যমূর্তিলেখা চিতোরের বাজপতাকা একবার মাত্র সন্ধার আলোয় বিদ্যুতের মতে চমকে উঠল, তারপরেই শব্দ উঠল — ‘আল্ল হো আকবর, শাহেনশা কি ফতে ! পাঠানের পায়েব তলায় মহারানার রাজচ্ছত্র চূর্ণ হয়ে গেল ! সূর্যদেব সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার করে অস্ত গেলেন ; রক্তমাংসের লোভে রণস্থলেব ソミ○
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।