হাম্বির চিতোর তখনো পাঠানের হস্তগত হয়নি। মেবারে তখনো ভীমরানার অটুট প্রতাপ। মহারানা লক্ষ্মণসিংহের সুশাসনে দেশ যখন শান্তিতে মুখে ধনে ধান্তে পরিপূর্ণ, সেই সময় একদিন যুবরাজ অরিসিংহ দলবল নিয়ে শিকারে গিয়েছিলেন । আন্ধোয় বনের ধারে উজলা গ্রামে মেঠো রাস্তায় শিকারী দল রাজকুমারের সঙ্গে-সঙ্গে শিকারের পিছনে ছুটে চলেছিল— শিকার একটা ছচালো-মুখ দাতালো বরাহ । বেলা দুপুরে মেঠো রাস্তায় অনেকখানি ধুলে উড়িয়ে অনেকদূর ছুটে গিয়ে রাজকুমারের শিকার রাস্তার একধারে জনার খেতের ভেতর ঝাপিয়ে পড়ল— সেখানে ঘোড়া চলে না, তীর তো ছোটেই ; } খেতের মাঝে মাচার উপর দাড়িয়ে এক রাজপুতের মেয়ে এই তামাশা দেখছিল— পরনে তার পল ওড়নি, নীল আঙ্গিয় । রাজকুমারের পায়ে ছিল সবুজ দোপাট্ট ! দুজনের চোখ দুজনের উপর পড়েছিল। শিকারের আশায় হতাশ হয়ে অরিসিংহ যখন বুনাস নদীর তীরে আমবাগানে ফিরে চলেছিলেন, খেতের ভিতর থেকে রাজপুতের মেয়ে সেই সময় বরাহট মেরে শিকারীদের ভেট দিয়ে গেল। রাজকুমার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ক্যয়সে মারা ? বালিকা বল্লমের মতো সিধে একটা জনারের শিষ দেখিয়ে বললে—‘ইসিসে ঘায়েল কিয়, তার ধুলোমাখ। কালো চুলগুলি সাপের ফনার মতো সুন্দর মুখের চারিদিকে বড় শোভা ধরেছিল। তার সুডোল হাতে পিতলের র্কাকন সূর্যের আলোয় সোনার মতো কেমন ঝকঝক করছিল। বুনাস নদীর তীরে আমবাগানের শীতল ছায়ায় সেই কথাই ভাবতে ভাবতে রাজকুমারের তন্দ্র আসছিল। ১২৭
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।