সূর্য অস্ত গেলেন। হাম্বিরকে নিয়ে সেই বেতো ঘোড়া খটর-খটর করে গ্রাম ছাড়িয়ে বনের পথে প্রবেশ করলে । আরাবল্লী পর্বতের নিবিড় বনচ্ছায়ায় ঘোর অন্ধকার । তুহাত তফাতে লোক চেনা যায় না । হাম্বির তার বেতো ঘোড়াটাকে একদিকে ছেড়ে দিয়ে কালো কম্বল মুড়ি দিয়ে নিঃশব্দে সেই বনের অন্ধকারে লুকিয়ে পড়লেন । ছায়ার সঙ্গে যেন একটা ছায়া মিলিয়ে গেল। যেমন শিকারের সন্ধানে বাঘ ফেরে, তেমনি সেই অন্ধকার বনে হাম্বির নিঃশব্দে অতি সন্তপণে গিরি-নদীর পারে-পারে, ঘনবনের ধারে-ধারে, পাহাড়ের গহবরে-গহবরে ডাকাতের সন্ধান করে চললেন । তৃষ্ণার সময় নদীর জল, ক্ষুধার সময় গাছের ফল, ঘুমের সময় পর্বতের গহবর, এমনি করে হাম্বিরের দিন কেটে চলল। যে সব মহাবনে মানুষের চলাচল নেই– দিবার ত্রি যেখানে কেবল সবুজ অন্ধকার আর বাঘ-ভালুকের গর্জনে পরিপূর্ণ দিনের পর দিন হাম্বির সেই সব মহাবনের ভিতর ঘুরে বেড়াতে লাগলেন ; বনের আর অন্ত নেই । একদিন ঘোর অমাবস্যার রাত্রি— বনের ভিতর দিয়ে পথ দেখে চলা তাসম্ভব, হাম্বির একটা প্রকাণ্ড শালগাছে চড়ে এদিক ওদিক চেয়ে দেখছেন তার মনে-মনে ভাবছেন, দূর কর ছাই, ডাকাতের সন্ধান কি পাওয়া যাবে না ? আজ তো এই অন্ধকারে আর পথ চলা অসম্ভব । আজ রাত্রি দেখছি এই গাছেই কাটাতে হল । উঃ, বনের তলায় মশাগুলো ভনভন করে ডাকছে দেখো । আবার ঐ যে বাঘের গর্জন ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে । এত মশার ভনভননি তার বাঘের গর্জন কোনো দিন তো শুনিনি । যাই হোক আজ রাত্রিতে আর মাটিতে পা দেওয়া নয়। এ বনটায় তত গাছপালা নেই কিন্তু জীবজন্তু দেখছি অনেক আছে । হাম্বির নিজেকে বেশ করে গাছের সঙ্গে বেঁধে নিদ্রা গেলেন । অনেক রাত্রে হাম্বিরের ঘুম ভাঙল । হাম্বির দেখলেন তাকাশের একদিকে রাঙা আলো দেখা দিয়েছে । সকাল হয়েছে ভেবে হাম্বির ১৩৯
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।