নির্ভয়েছিল। গাছের ডালেটিয়াপাখি লাল ঠোঁটে ধান খুটিছিল, নদীর জলে মনের সুখে হাস ভাসছিল, কুশবনে পোষা হরিণ নির্ভয়ে খেলা করছিল ; আর শকুন্তলা, অনসূয়া, প্রিয়ম্বদা— তিন সখী কুঞ্জবনে গুন-গুন গল্প করছিল। এই তপোবনে সকলে নির্ভয়, কেউ কারো হিংসা করে না। মহাযোগী ;কশ্বের তপোবনে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায় । হরিণশিশু ও সিংহশাবক এক বনে খেলা করে। এ-বনে রাজাদেরও শিকার করা নিষেধ। রাজার শিকার— সেই হরিণ— উধ্বশ্বাসে এই তপোবনের ভিতর চলে গেল। রাজাও অমনি ধনুঃশর ফেলে ঋষিদর্শনে চললেন । সেই তপোবনে সোনার রথে পৃথিবীর রাজা, আর মাধবীকুঞ্জে রূপসী শকুন্তলা--তুজনে দেখা হল ! এদিকে মাধব্য কী বিপদেই পড়েছে! আর সে পারে না ! রাজভোগ না হলে তার চলে না, নরম বিছানা ছাড়া ঘুম হয় না, , পালকি ছাড়া সে এক পা চলে না, তার কি সারাদিন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ওই বরা যায়, ওই বাঘ পালায়’ করে এ-বন সে-বন ঘুরে বেড়ানো পোষায় ? পহুলের পাতা-পচা কষা জলে কি তার তৃষ্ণ ভাঙে ? ঠিক সময় রাজভোগ না পেলে সে অন্ধকার দেখে, তার কি সারাদিনের পর একটু আধপোড়া মাংসে পেট ভরে ? পাতার বিছানায় মশার কামড়ে তার কি ঘুম হয় ! বনে এসে ব্রাহ্মণ মহা মুশকিলে পড়েছে! সমস্ত দিন ঘোড়ার পিঠে ফিরে সর্বাঙ্গে দারুণ ব্যথা, মশার জ্বালায় রাত্রে নিদ্রা নেই, মনে সর্বদা ভয়— ওই ভালুক এল, ওই বুঝি বাঘে ধরলে! ভয়ে ভয়ে বেচারা আধখানা হয়ে গেছে। রাজাকে কত বোঝাচ্ছে— ‘মহারাজ, রাজ্য ছারেখারে যায়, শরীর মাটি হল, আর কেন ? রাজ্যে চলুন। রাজা তৰু শুনলেন না, শকুন্তলাকে দেখে অবধি রাজকার্য ছেড়ে, মৃগয়া ছেড়ে, তপস্বীর মতো সেই তপোবনে রইলেন। রাজ্যে রাজার মা ব্রত করছেন, রাজাকে ডেকে পাঠালেন, তবু রাজ্যে ফিরলেন না, Եր
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।