যায় না, কেবল একদিক থেকে ঝরঝর করে একটা শব্দ আসছে— যেন অন্ধকারের ভিতরে একটা ঝরনা পড়ছে। যেদিক থেকে জলের শব্দ আসছিল, সেইদিক দেখিয়ে কমলারানী হাম্বিরকে বললেন, “ও ঝরনার ধারে পাহাড়ের গায়ে একটা প্রকাণ্ড বটগাছ, তারই পাশ দিয়ে একটা সুড়ঙ্গ পাতালের দিকে নেমে গেছে ; সেই সুড়ঙ্গের ভিতরে পদ্মিনীরানী চিতার আগুনে পুড়ে মরেছিলেন। ওই সুড়ঙ্গের শেষে একটা গুহায় কারুণী দেবীর মন্দির । শুনেছি সেইখানে একটা অজগর সাপ পাহারা দিচ্ছে, আর ঠিক তার মাথার উপরে ভবানীর খাড়া ঝুলছে । আমি অনেকবার সেই সুড়ঙ্গ পর্যন্ত গেছি কিন্তু ভিতরে যেতে সাহস হয়নি ? হাম্বির বললেন, ‘তুমি সুড়ঙ্গ পর্যন্ত আমার সঙ্গে চলো ; সেই বটগাছের তলায় তোমাকে রেখে আমি ভেতরে যাব।' শ্মশানের একধার দিয়ে একটা আঁক-বাক মুড়ি-পথ অন্ধকারের দিকে নেমে গেছে! দুজনে সেই পথে পায়ে-পায়ে চললেন ; কতদূর চলে সামনে একটা জলের নালা— আর রাস্তা নেই! পাথর কেটে ঝরনার জল কুলকুল করে ছুটে চলেছে। নালার জল এক হাটু, কিন্তু বরফের মতো ঠাণ্ডা— পা রাখা যায় না। হাম্বির কমলারানীকে দুই হাতে তুলে ধরে সেই জলের উপর দিয়ে হেঁটে সেই বটগাছের দিকে চলেছেন। শুনতে পাচ্ছেন, দূরে যেন পাহাড়ের ভিতর থেকে ঝনঝন করে একটা শব্দ আসছে ! কারা যেন লোহার কপাট ধরে নাড়া দিচ্ছে । বটগাছের একটা শিকড় ধরে হাম্বির ডাঙায় উঠলেন। সেখানটা এমন নিস্তব্ধ, এমন অন্ধকার যে মনে হয়, পৃথিবী ছেড়ে কোথাও এসেছি! সেই বটতলায় কমলারানীকে বসিয়ে রেখে হাম্বির অন্ধকারে দুহাত বাড়িয়ে সুড়ঙ্গের ভিতর নেমে চললেন । তুদিকে পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে জল পড় স্থ! একটু আলো নেই, একটু শব্দ নেই, সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না, পিছনে কিছু সাড়া দিচ্ছে না ! নীল 8 (tર
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।