কত ওজর-আপত্তি করে মাধব্যকে সব সৈন্ত্যসামন্ত সঙ্গে মা-র কাছে পাঠিয়ে দিয়ে একলা সেই তপোবনে রইলেন। মাধব্য রাজবাড়িতে মনের আনন্দে রাজার হালে আছে, আর এদিকে পৃথিবীর রাজা বনবাসীর মতো বনে বনে ‘হা শকুন্তলা ! হে শকুন্তলা ? বলে ফিরছে। হাতের ধনুক, তৃণের বাণ কোন বনে পড়ে আছে ! রাজবেশ নদীর জলে ভেসে গেছে, সোনার অঙ্গ কালি য়েছে, দেশের রাজা বনে ফিরছে। আর শকুন্তলা কী করছে ? নিকুঞ্জবনে পদ্মের বিছানায় বসে পদ্মপাতায় মহারাজাকে মনের কথা লিখছে । রাজাকে দেখে কে জানে তার মন কেমন হল ! একদণ্ড না দেখলে প্রাণ র্কাদে, চোখের জলে বুক ভেসে যায়। দুই সখী তাকে পদ্মফুলে বাতাস করছে, গলা ধরে কত আদর করছে, আঁচলে চোখ মোছাচ্ছে, আর ভাবছে— এইবার ভোর হল, বুঝি সখীর রাজা ফিরে এল । তারপর কী হল ? দুঃখের নিশি প্রভাত হল, মাধবীর পাতায় পাতায় ফুল ফুটল, নিকুঞ্জের গাছে গাছে পাখি ডাকল, সখীদের পোষা হরিণ কাছে এল । আর কী হল ? বনপথে রাজা-বর কুঞ্জে এল । আর কী হল ? পৃথিবীর রাজা আর বনের শকুন্তলা— কুজনে মালা-বদল হল । দুই সখীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হল । তারপর কী হল ? . তারপর কতদিন পরে সোনার সাঝে সোনার রথ রাজাকে নিয়ে রাজ্যে গেল, আর আঁধার বনপথে দুই প্রিয়সখী শকুন্তলাকে নিয়ে ঘরে গেল ।
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।