মিলিয়ে গেল! মকুল পালকি থেকে আবার কখন হাউই ওঠে দেখবার জন্য মুখ বাড়িয়ে বসে রইলেন কিন্তু আকাশ যে অন্ধকার সেই অন্ধকারই রইল । মকুল রাত্রির মধ্যে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে-থেকে ঘুমিয়ে পড়েছেন, রানীর পালকি নির্জন মাঠের পথে আস্তে-আস্তে চলেছে, মাটির উপরে আটটা পালকি-বেহারার খসখস পায়ের শব্দ ছাড়া আর কোনো দিক থেকে কোনো শবদ রানীর কানে আসছে না। রানী অন্ধকাবের মধ্যে মুখ বাড়িয়ে চেয়ে রয়েছেন। একবার মনে হল যেন একদল লোক খুব দূরে ঘোড়া ছুটিয়ে বেরিয়ে গেল, একবার দেখলেন যেন রাস্তার ধারে একজন কে বল্লম হাতে চুপ করে দাড়িয়ে – পালকি কাছে আসতেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। গোসুন্দ নগরে সেই দশটার তারাবাজি দেখে রানী চণ্ড এসে পৌচেছেন বুঝেছিলেন, তারপর থেকে কিন্তু চণ্ডকে স্পষ্ট করে দেখা এখনো র্তার ঘটে ওঠেনি। চণ্ড যে তার কাছাকাছি তাছেন, সেটা কেবল এই ছায়া-ছায়া রকম দেখছিলেন ! রাত গভীর – পালকি চিতোরের কাছাকাছি এসে পড়েছে, দূর থেকে কেল্লার দেয়াল আকাশের গয়ে কালো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । পাহাড় বেয়ে রানীর পালকি কেল্লাৰ ফটকের দিকে উঠে চলল কিন্তু তখনে চণ্ডের কোনো দেখা নেই। ঘোড়ার পায়ের শব্দ কী তলোয়ারের ঝনঝন কিছুই শোনা যাচ্ছে না ; রানীর বুক কপিছে, র্তার চোখের সামনে কেল্লার ফটকের বড়ো দরজা দুখান আস্তে-আস্তে খুলে গেল যেন একটা রাক্ষস অন্ধকারে মুখটা হা করলে। তারপর আস্তে-আস্তে রানীর পালকি কেল্লার মধ্যে ঢুকল, রানী একবার পালকি থেকে মুখ কুকিয়ে পিছনের দিকে দেখলেন ফটকের সামনে একদল ঘোড়সওয়ার খোলা তলোয়ার মাথায় ঠেকিয়ে তার সঙ্গে কেল্লায় প্রবেশ করলে, তাদের সর্দার প্রকাগু এক কালো ঘোড়ায় – মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার কালোসাজ, নিমেষের মধ্যে এই ছবিটা রানী দেখতে পেলেন ; চণ্ডকে চিনতে র্তার বাকি রইল না। তারপর ১৭২
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।