‘জয় মকুলজী কি জয়! জয় চণ্ডজী কি জয় ? শব্দে আকাশ কঁাপিয়ে উঠল, অমনি চিতোরে ছোটে-বড়ে ছেলে-বুড়ে তলোয়ার খুলে রাজপথে রানীর পালকির চারিদিক ঘিরে নিয়ে রাজবাড়ির দিকে চলল। যত মাড়োয়ারী যার এত বুক ফুলিয়ে রাজগিরি ফলাচ্ছিল, সব আজ চণ্ডের নাম শুনেই ইকুরের মতো গর্তে গিয়ে লুকোল, কারো এমন সাহস হল না যে রণমল্লকে গিয়ে খবরট। দেয়। আর খবর দিয়েই বা কী হবে ? দেওয়ালীর রাতে খুব করে সিদ্ধি খেয়ে রণমল্ল খাটিয়ায় পড়ে নাক ডাকাচ্ছেন। দাই একগাছি মোট দড়ি দিয়ে খাটিয়ার সঙ্গে তাকে আচ্ছা করে বেঁধে ছাদের উপর থেকে তামাশা দেখতে গেল । রণমল্লের ভোজপুরী আর মাড়োয়ারী দারোয়ানগুলো ঢাল তলোয়ার বেঁধে তালপাতার সেপায়ের মতো কেবল হাত-পা ছুড়তে লাগল, লড়াই দেবার আর সাধ্য হল না । চণ্ড জোর করে তালা ভেঙে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন । গোলমালে রণমল্প জেগে উঠে দেখেন তার চারিদিকে খোলা তলোয়ার, নিজের হাত-পা বাধা ; তার সাহস ও ছিল জোরও ছিল ; হাজার হোক তিনি মাড়োয়ারের রাজা, তার তলোয়ার দেখে তার সিদ্ধির ঘোর ও কেটে গেছে । তিনি পিঠে বপা খাটিয়াখানাস্থদ্ধ দাড়িয়ে উঠে চণ্ডকে বললেন, “আমার বাধন খুলে দাও, তারপর দেখা যাবে কে জেতে কে হারে । তুমি বীর, রাজার ছেলে—আমিও একটা দেশের রাজ, আমাকে জানোয়ারের মলে বেঁধে মারা তোমার উচিত হয় না ? চণ্ড রণমল্লের বাধন খেলিবর জন্তে ঘরে ঢুকবেন এমন সময় দাই ছুটে এসে বললে, ’সাবধান, ওকে এক পুড়ে মরতে দাও, সরে যাও, না হলে সবাই মরবে। দুম করে একটা ভয়ংকর আওয়াজ হয়ে ঘরের কোণে একরাশ বারুদ জলে উঠল, তারপর দাউ-দাউ করে ঘরখানায় আগুন লেগে গেল ! ছু চে-বাজি দিয়ে ঘরখান। দাই যে কখন ভতি করে রেখেছিল কে জানে ? ছুচোর মলে রণমল্ল পুড়ে মেলেন – ‘খুলে দে ! খুলে দে ! বলে চিৎকার করতে করতে। যাকে ১৭৩
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।