ন, ফিরেও দেখলে না। একে দুর্বাসা মহা অভিমানী, একটুতেই মহা রাগ হয়, কথায়-কথায় যাকে-তাকে ভস্ম করে ফেলেন, তার উপর শকুন্তলার এই অনাদর— তাকে প্রণাম করলে না, বসতে আসন দিলে না, পা ধোবার জল দিলে না ! দুর্বাসার সর্বাঙ্গে যেন আগুন ছুটল, রাগে কাপতে র্কাপতে বললেন—‘কী ! অতিথির অপমান ? পাপীয়সী, এই অভিসম্পাত করছি— যার জন্তে আমার অপমান করলি সে যেন তোকে কিছুতে না চিনতে পারে।” হায়, শকুন্তলার কি তখন জ্ঞান ছিল যে দেখবে কে এল, কে গেল ! তুর্বাসার একটি কথাও তার কানে গেল না। মহামানী মহর্ষি দুর্বাসা ঘোর অভিসম্পাত করে চলে গেলেন— সে কিছুই জানতে পারলে না, কুটির-দুয়ারে আনমনে যেমন ছিল তেমনি রইল । অনসূয়া প্রিয়ম্বদা তুই সখী উপবনে ফুল তুলছিল, ছুটে এসে দুর্বাসার পায়ে লুটিয়ে পড়ল। কত সাধ্য-সাধনা করে, কত কাকুতিমিনতি করে, কত হাতে-পায়ে ধরে তুর্বাসীকে শান্ত করলে ! শেষে এই শাপান্ত হল— ‘রাজা যাবার সময় শকুন্তলাকে যেআংটি দিয়ে গেছেন সেই তাংটি যদি রাজাকে দেখাতে পারে তবেই রাজা শকুন্তলাকে চিনবেন ; যতদিন সেই আংটি রাজার হাতে না-পড়বে ততদিন রাজা সব ভুলে থাকবেন। দুর্বাসার অভিশাপে তাই পৃথিবীর বাজা সব ভুলে রইলেন! বনপথে সোনার রথ আর ফিরে এল না ! এদিকে দুর্বাসাও চলে গেলেন আর তাত কশ্বও তপোবনে ফিরে এলেন। সারা পৃথিবী খুজে শকুন্তলার বর মেলেনি। তিনি ফিরে এসে শুনলেন সারা পৃথিবীর রাজা বনে এসে তার গলায় মালা দিয়েছেন। তাত কশ্বের আনন্দের সীমা রইল না, তখনি শকুন্তলাকে রাজার কাছে পাঠাবার উদযোগ করতে লাগলেন । দুঃখে অভিমানে 22
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।