তো রাজা, বিচার করো দেখি আমাদের দুইজনের মধ্যে কে বড়ো ! বীণা হস্তে সরস্বতী ঝংকার দিয়ে বললেন, ‘আমি বড়ে, না ও বড়ো ? লক্ষ্মী বীণাপাণির ঝংকারের উপর অলংকার দিয়েবললেন, এই আমি, না ওই ওট, কে বড়ো? রাজা দেখেন বড়ো গোলযোগ –একে বড়ো করলে উনি চটেন, ওঁকে খাটো করলে তিনি চটেন । রাজা দুজনের মধ্যে দাড়িয়ে মাথা চুলকোচ্ছেন দেখে বিক্রমাদিত্যের ছোটে রানী বলে উঠলেন –ঠাকরুনর রাজাকে কিছু খেয়ে নিতে দিন, সারাদিন বিচার করে ওঁর এখন মাথার ঠিক নেই, সুবিচার করেন কেমন করে? আজকের রাতটা ওঁকে ভেবে ঠিক করতে দিন, কাল রাজসভায় ঠিক বিচার হয়ে যাবে দেখবেন । রাজা বললেন, ‘এ পরামর্শ মন্দ নয়, কঠিন সমস্যা, একটু সময় পেলে ভালো হয়। দেবীর ‘তথাস্তু’ বলে বিদায় হলেন । রাজা জলযোগে বসে ছোটোরানীকে বললেন, ‘দেবীদের আজকের মতো তো বিদায় করলে কিন্তু কালকের বিচারটা কী হবে কিছু ঠাউরেছ কি ? বানী ভিরকুটি করে বললেন, ‘বিচারের আমি কী জানি ! তোমার সভায় নবরত্বের মধ্যে কেউ পণ্ডিত, কেউ কবি, কেউ মন্ত্রী, কেউ যন্ত্রী ; তাদের শুধোও না। রাজা মাথা চুলকে সভায় প্রস্থান করলেন। সভার মধ্যে নবরত্ব হাজির --ধন্বন্তরি, ক্ষপণক, অমরসিংহ, শঙ্কু, বেতালভট্ট, ঘটকপর,কালিদাস, বরাহমিহির, বররুচি। রাজার প্রশ্ন শুনে ন’জনেই মাথা চুলকোতে আরম্ভ করলেন ; রাত্রি দুই প্রহর বাজল কিছুই মীমাংসা হল না, দুই দেবীর বিচার কী হিসাবে করা যায় ? সরস্বতীকে বড়ো বললে চটেন লক্ষ্মী, রাজ্যপাট সব যায়, নবরত্বের মাসহারা ও বন্ধ হয় ! আবার যদি বলা যায় সরস্বতী ছোটো, লক্ষ্মীই বড়ো, তবে বিদ্যে পালায়, বুদ্ধি পালায়, কালিদাসের কবিতা লেখা বন্ধ, ধন্বন্তরির চরকসংহিতা, বরাহমিহিরের পাজি পুথি, খনার বচন সবই মাটি । রাজাই বা কী বুদ্ধি নিয়ে রাজ্য চালান, হিসেব দেখেন, বিচার করেন? বিক্রমাদিত্য বিষম ভাবিত হয়ে অন্দরে এসে বিছানা নিলেন । রানী দেখেন রাজার নিদ্রা নেই, কেবল এপাশ-ওপাশ করছেন ; যেন শয্যাকণ্টকী হয়েছে। তারপর —’ ఫిసె
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।