পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাগিয়ে দিয়ে বললুম, আচ্ছা দাদা, ওই যে ঘোড়া-ভূত আর ঝি বিপোকা দেখে এলুম, ওদের কথা তুমি কিছু জানো কি ? ‘জানি বইকি ! ওরা তো সেদিনের ছেলে ’ বলেই বুড়ো গল্প শুরু করলে : দেখো, এই পৃথিবী তখন সবে তৈরি হয়েছে, আমাদের মতো হু-চারটি গাছ ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই ; –নদী নেই, পাহাড় নেই, এমন কি বাতাসে শব্দটি পর্যন্ত নেই ;--কেবল বালি ধু-ধু করছে –ঠিক এই জায়গাটির মতো । আমার তখন সবেমাত্র কচিকচি ফুটি কাটা বেরিয়েছে —ছোটো ছেলের কচি-কচি ফুটি দাতের মতো । সেই সময় তারা গান বড়ে ভালোবাসে, তারা দেখতে অনেকটা মানুষের মতো, কিন্তু ফড়িং গুলোর মতো তাদের ডানা আছে, পাখিগুলোর মতো পা, ঝাক বেঁধে তারা আমাদের কাছে উড়ে এসে বসল আর গান গাইতে আরম্ভ করলে। আকাশ-বাতাস তাদের গানের সুরে যেন বেজে উঠল । সে যে কী চমৎকার তা তোমাকে আর কী বলব !- আমরা তার আগে শব্দ শুনিনি, গান ও শুনিনি –আনন্দে যেন শিউরে উঠলুম। বালি ঠেলে যত গাছ, যত ঘাস মাথা তুলে কান পেতে সেই গান শুনতে বেরিয়ে এল, পৃথিবীর ভিতর থেকে পাহাড়গুলো গা-ঝাড় দিয়ে উঠে এল, পাহাড়ের ভিতর থেকে নদীগুলো ছুটে-ছুটে বেবিয়ে এল। গান শুনতে-শুনতে দেখতে-দেখতে আমরা বড়ো হয়ে উঠলুম। কিন্তু যারা গান গাইতে এল, কী খেয়ে তার বঁাচে ? পৃথিবীতে তো তখন ফুলও ছিল না, ফলও ছিল না ; ছিল কেবল আমাদের মতো বড়ো-বড়ো গাছ ; কাটা আর লতা আর পাতা। নদীতে মাছও ছিল না, আকাশে পাখিও ছিল না যে তারা ধরে খায়। তবু তারা অনেকদিন বেঁচে ছিল কেবল গান গেয়ে । একদিন হঠাৎ শুনি যে গান বন্ধ হয়ে গেছে —তারা সবাই মরে গেছে —শুকনো পাতার মতো তাদের সোনার ডানা বাতাসে উড়ে এসে আমাদের গায়ে বিধতে লাগল, কিন্তু তাদের গানের সুর আর শোনা গেল না। তারপর পৃথিবীতে অনেকদিন २२७