‘ওরে ছাড়, ছাড়! আমার চরকা-কাটা বন্ধ করিস নে, দেখচিস নে এই চরকার জোরেই চাদামামার সংসার চলছে ? সত্যিই দেখি চরকা বন্ধ হতেই চাদামামা গড়াতে-গড়াতে থেমে গিয়ে লাঠিমের মতো মাটির ওপর কাত হয়ে পড়েছেন । আমি খরগোশটি মামির হাতে দিয়ে বললুম, কই মামি, চালাও দেখি মামাকে ’ খরগোশ চরকায় যেমন এক পাক দিয়েছে আমনি চাদামামা গাঝাড় দিয়ে ঘুরতে লেগেছেন। বুড়ি ডাকছে, ‘দে পাক, দে পাক ? খরগোশ ততই পাক দিচ্ছে আর চাদামামাও তত ঘুরপাক দিয়ে ডিগবাজি খেয়ে রবারের বলের মতো নাচতে-নাচতে চলেছেন। যত বলি, মামি আর পাক দিও না, মামাকে আমার অত ঘুরিও না, মামা হাপিয়ে দম আটকে কোনদিন মারা পড়বেন যে ! একটু রয়ে-বসে চালাও, শেষে বুড়ে বয়েসে মামার কি মাথা ঘুরুনির রোগ ধরিয়ে দেবে ? জানি কি যে মামি আমার কালা ! আমার একটি কথাও বুড়ির কানে যায়নি। সে কেবল বলছে, ‘দে পাক, দে পাক, ’ আমি যত ইশরা করে বলি, ‘আস্তে, আস্তে ?— বুড়ি ভাবে জোরে চালাতে বলছি, ততক্ট ডাকে, ‘দে পাক, দে পাক ? মামা রেলের গাড়িব মতো হু-হু করে ছুটে চলেছেন। ‘ওরে থামা, থাম ! মাথা ঘুরে গেল, আর যে পারিনে? — বলেই লাঠি তুলেছি খরগোশটাকে মারতে । যেমন লাঠি ংে লা অমনি খবগোশটা খ্যাক করে তেড়ে এসেছে, ক্যাচ করে চরকাটা বন্ধ হয়ে গেছে আর পটাং করে মামির হাতের সুতো কেটে গেছে। যেমন স্বতে কাটা আর ঝপাং করে চাদামামা গিয়ে একটা নদীর জলে পড়েছেন, পড়েই ফেটে চৌচির! ‘কী করলে গো মামি !" বলেই চমকে দেখি নদীর ওপারে পালকিযুদ্ধ আমি ঠিকরে পড়েছি! কোথায় বুড়ি, কোথায় চরকা, কোথায় বা সে খরগোশ ! নদীর জ েদেখি একরাশ কাচের টুকরোর মতো চাদামামার ভাঙা আলো, খানিক চকচক করেই নিভে ૨૨૧
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।