গেল। আকাশের দিকে চেয়ে দেখি সত্যিই চাদামামার আধখানা কোথায় উড়ে গেছে। ভাগ্যি নদীতে তেমন জল ছিল না, নইলে সবাই আজ ডুবেছিলাম আরকি! বড় তেষ্টা পেয়েছিল। নদী থেকে এক ঘটি জল খেয়ে ঠাণ্ডা হয়ে তবে বঁচি ! নদীর ধারেই একটা গা রয়েছে। দেখে সাহস হল ; ভাবলুম —আজ রাত্তিরে ওই গায়ে কারু গোয়াল-ঘরে শুয়ে থাকি ; কাল সকালে এখান থেকেই ফিরে পালাব, পিসির বাড়ি যাওয়ায় আর কাজ নেই বাবা ! এই মনে করে গায়ের ভেতরে গিয়ে দেখি, সেখানে জনমানব নেই। ডাক-হাক করে কারো সাড়াও পাইনে! যাই হোক, গা ছেড়ে আর এক পা-ও নড়া নয়। চাদর মুড়ি দিয়ে একটা ঘরের দাওয়ায় শুয়ে পড়লুম। যেমন শোয়, আর ঘুম— অকাতরে ঘুম। খানিক পরে জেগে দেখি, সেই মনসাতলার লণ্ঠন-ভূতটা আর তার চার বন্ধু আলো নিয়ে আমার মুখের কাছে বসে আছে। তবে রে ? বলেই যেমন উঠতে যাব অমনি তারা বলে উঠেছে, ‘দেখো বাবু, ফের যদি লাঠি দেখাও কি মাৰতে আস, তবে আবার আমরা তোমাকে ফেলে পালাব। আর যদি চুপ করে ভালোমানুষটি হয়ে পালকিতে বসে থাক, তবে ওই-কি-বলে ও-কি-তলা পর্যন্ত তোমাকে আমরা পৌছে দেব। বুঝলুম, ভূতগুলো ভয়ে রামনাম মুখে আনতে পারছে না, তাই পিসির বাড়ি যেতে যে রামচণ্ডীতলার কথা শুনেছি তাকে বলছে— কি-বলে-ও-কি তলা । ভূতগুলো ভয় পেয়েছে দেখে সাহস হল ; পালকিতে আবার উঠে বসলুম। এবারে আর ভয় করছে না- ভোর হবার এখনো দেরি আছে কিন্তু এরই মধ্যে ভূতগুলো যেন একটু ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে, মাঠে আর ঘন-ঘন আলেয়া দেখা দিচ্ছে না, পথের ধারে তালগাছ তো দেখাই দিচ্ছে না, কোথাও মনসাগাছের ছায়াটি পর্যন্ত আর দেখা २२४”
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।