খেজুর-অঁাটি এসে গায়ে পড়ল, হয়তো দেখছি খেজুরতলায় যেন একটা কচি ছেলে ওমা-ওমা করে র্কাদছে, শুনে ইচ্ছে হয় দৌড়ে গিয়ে দেখি— বুঝি কাদের ছেলে পথ হারিয়ে কেঁদে বেড়াচ্ছে ; হয়তো আমার নাম ধরেই পেছন থেকে কে একবার ডাকলে, গলাটা যেন চেনা-চেন, ফিরে দেখি কেউ কোথাও নেই! অন্ধকারে হয়তো দেখলুম মাঠের মাঝে একটা জায়গায় খানিকটা জ্বলন্ত বালি তুবড়িবাজির মতো ফস করে জলে উঠল, ইচ্ছে হয় গিয়ে দেখি কিন্তু গেলেই বিপদ– একেবারে ভূতে ধরে জরিমানা করে তবে ছাড়বে, নয়তো মট করে ঘাড় মটকে দেবে। আমি আর এদিক-ওদিক কোনোদিক না দেখে ‘সীতারামসীতারাম বলতে-বলতে চলেছি। ওই দেখা যাচ্ছে বালির পাহাড়ের ওপরে পঞ্চবটার বন, বনের মাথায় রামসীতা মন্দিরের চুড়ে । মনে হচ্ছে এই কাছেই, আর একটু গেলেই পৌছে যাব, কিন্তু যতই এগিয়ে < চহ ৩তই যেন সব দূরে সরে যাচ্ছে— আমার কাছ থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে। আমিও দৌড়েছি খোড়া পা নিয়ে, দৌড়েছি হাপাতে-হাপাতে, দৌড়েছি উঠি-তো-পড়ি বালিব ওপর দিয়ে। এইবার শুনতে পাচ্ছি মন্দিরের খোল-করতাল বাজছে ; দেখতে পাচ্ছি জাম্ববানের দল আগুন জ্বালিয়ে গাছতলায় বসে আছে ; হনুমানের ল্যাজ বটের ঝুবির মতো পাতাব ফাক দিয়ে ঝুলে পড়েছে। আর ভয় কী ! বলে যেমন রামচণ্ডীতলায় ছুটে যাব আর নাকটা গেল ঠুকে। একি, নাক ঠুকল কিসে? এই তো সা. নে সোজা রাস্তা—গাছের তলা দিয়ে মন্দিরে উঠেছে ; তবে নাক ঠোকে কিসে ? নাকে হাত দিয়ে দেখি নাকটা বিলিতি-বে গুনের মতো ফুলে উঠেছে। সামনে হাতড়ে দেখি প্রকাণ্ড কাচ, তার ভেতর থেকে ফ্রেমে-বাধা ছবির মতে রামচণ্ডীর মন্দির, পঞ্চবটী বন, হনুমানের ল্যাজ, সবই দেখা যাচ্ছে ; কেবল তার ভেতরে যাওয়া যাচ্ছে না। ফড়িংগুলো যেমন লণ্ঠনের চারদিকে মাথা ঠুকে মরে, আমিও তেমনি ২৩৩
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।