ঘুরে বেড়াচ্ছি চারদিকে কেবল নাক ঠুকে-ঠুকে । নাকট বেগুনের মতো গোল হয়ে ফুলে উঠেছিল, কঁাচে লেগে-লেগে ক্রমে চ্যাপট হয়ে গেল, তবু ভেতরে ঢোকবার রাস্তা কিন্তু পেলুম না। হঁাপিয়ে গেছি, বালির ওপরে বসে পড়েছি, হনুমানের গোটাকতক ছানা আমাকে দেখে দাত বের করে হাসছে। ভারি রাগ হল, রাগে বুদ্ধিমুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল। ‘জয় রাম!’ বলে দিয়েছি এক লাফ সেই কাচের ওপরে। লাফ দিয়েই ভাবলুম— গেছি! হাত-পা কেটে, সকল গায়ে কাচ ফুটে রক্তারক্তি হল দেখছি! কিন্তু আশ্চর্য! রামনামের গুণে জলের মতে কঁাচ কেটে একেবারে ভেতরে গিয়ে পড়েছি— হনুমানের জাম্ববানের দলের মাঝখানে । আর অমনি চারদিকে রব উঠেছে— ‘জয় রাম! জয়-জয় রাম, সীতারাম। সমুদুরের ডাক শুনছি— ‘জয়-জয় রাম | বাতাসে শব্দ শুনছি— ‘জয় রাম!’ চারদিকে ‘জয় রাম সীতারাম ? কেউ আমাকে একটি কথাও বললে না, আমার দিকে ফিরেও চাইলে না ! আমি রামসীতা দর্শন করে একটা কঁটিাবন পেরিয়ে সমুদ্রের ধারে গিয়ে পড়েছি। সেখানে দেখি, ছটা বেহারা আমার পালকিটি নিয়ে বসে আছে— দেখতে কালো কিচ কিন্দে । কে হে বাপু তোমরা পালকিটি নিয়ে ? বাবুজি, আমরা তোমার গিসির চাকর— কিচ কিন্দে, কাস্থন্দে, বামুন্দে, ঝাপুন্দে, মালুন্দে, হারুন্দে ? আচ্ছা বাপু, চলে তো পিসির বাড়ি— বলেই আমি পালকি চেপে বসেছি । এবার চলেছি আরামে, কোনো ভয় নেই ; পা ছড়িয়ে বসে, পালকির দুই দরজা খুলে, মনের আনন্দে চারদিক দেখতে-দেখতে চলেছি। কেমন তালে-তালে এবার পালকি চলেছে— কালকামুন্দি, ঝালকামুন্দি ! বাকুনি নেই, পালকি চলেছে— আমকামুন্দি, জামকামুন্দি ! যেন জলের ওপর তুলতে-তুলতে নেচে চলেছে । २७8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।