পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দাড় ভেঙেচুরে ছিড়ে-খুড়ে কোথায় উড়ে গেল তার ঠিক নেই! সাতদিন সাতরাত আমাদের জাহাজ মোচার খোলার মতো জলে ভাসতে-ভাসতে শেষে এসে কালাপানিতে পড়ল ; সেখানে সমুদুরের জল, হুজুর, ওই মসুরের মতো কালো, আর যেন রেগে টগবগ করে ফুটছে! যেমন কালাপানিতে জাহাজ পড়েছে আর মাঝিমাল্লা সবাই আল্লা-আল্লা করে কেঁদে উঠেছে। যত বলি– কাদিস কেন ? কী হয়েছে বল ?— কেউ আর কথার উত্তরই দেয় না, কেবল ডাঙার দিকে একটা কাফেরদের মন্দির দেখায় আর ভেউ-ভেউ করে কাদে । এমন সময় জাহাজের কাপ্তেন আমার কাছে এসে বললে— কর্তা আর দ্যাহেন কী ? আল্লার নাম ল্যান ! ওই যে কাফেরদের মন্দির, ওর মাথায় একটা জাতার মতো চুম্বুক-পাথর আছে, তারি টানে জাহাজের যত লোহার পেরেক সব একটি-একটি করে খুলে ওই মন্দিরের গায়ে যেয়ে লাগবে আর জাহাজের কাঠগুলি ভুস করে আলগা হয়ে মাঝিমাল্লা মালমাত্তা সব জলে যাবে ! কত্তা সব জলে যাবে! বলতে-বলতে দেখি, জাহাজ থেকে পেরেকগুলো খুলে-খুলে বিষ্টির মতে গিয়ে সেই মন্দিরের চুড়োয় চুম্বক পাথরটায় লাগছে। দেখতে-দেখতে আমাদের মুরগি রাধবার লোহার হাড়ি আর রুটি সেকবার তাওয়াখানা গেল উড়ে । আমার হাতে আমার হীরেজহরতের লোহার সিন্দুকের চাবিটা ছিল, সেটাও দেখি পালাইপালাই কচ্ছে। আমি— ন আল্লা, না খোদা— চাবিটাকে মুখে পুরে আমার লোহার সিন্দুকটা জাপটে ধরেছি। এদিকে ভূস করে জাহাজটি ডুবে গেছে। আমি কিন্তু ঠিক ভেসে আছি; চুম্বকের টানে লোহার সিন্দুক আমার ঠিক ভাসতে-ভাসতে গিয়ে ডাঙায় ঠেকেছে। আমি টপাস করে বালিতে লাফিয়ে পড়েছি আর আমনি হুজুর— আমার সেই লোহার সিন্দুক, আমার অনেক টাকার সিন্দুক হুজুর, অনেক-কষ্টে-ঠকিয়ে-নেওয়া হীরে-জহরতে-ভরা সিন্দুক হুজুর, র্বে করে উড়ে পালিয়েছে— উড়ে-মেড়াদের সেই মন্দিরের চুড়োয় – বলেই সিন্ধবাদ মাটিতে লুটোপুটি খেয়ে কাদতে লাগল। ২৩৮