একচোখে চেয়ে আছে, আর আমরা সতরঞ্চি চালিয়ে একেবারে আগ্রায় এসে হাজির হয়েছি। দেখি তাজবিবির কবরটার চারদিকে বুড়ো শাজাহানটা কেঁদে-কেঁদে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! সেখান থেকে সোজা ফতেপুর শিক্রির দিকে সতরঞ্চি চালিয়ে দিলুম। আমার ছেলেবেলার বন্ধু আকবর সেখানে পঞ্চমহলের ওপরে বসে চতুরং খেলায় মত্ত ছিল। আমাকে দেখে ভারি খুশি । ‘এসো ভাই বোগদাদি ’ বলে আমায় পাশে বসালে । তার সঙ্গে এক পাঠশালায় পড়া, তাই সে আমাকে বলে বোগদাদি, আমি বলি তাকে আগারওয়ালা। অনেকদিনের পর দুজনের দেখা । দেখি আকবর কেমন বুড়িয়ে গেছে। চুল সব শাদা হয়ে গেছে। গোফদাড়ি সব ফেলে দিয়ে লোকটা কেমন যেন কাটখোট্টা-রকমের দেখতে হয়ে গেছে। তার আর সে চেহারা নেই । হজনে অনেকক্ষণ ছেলেবেলার গল্প করে আমি বললুম, তবে এখন আসি ভাই, অনেক দূর যেতে হবে ? 'আঃ বোসো না । মসুর কিছু খেয়ে নিক। ওরে, মসুরকে ভালো করে খাইয়ে-দাইয়ে নিয়ে আয় । আর ভাই, বুড়ে-বয়েসে মনের সুখ নেই । বড়ো ছেলে জাহাঙ্গিরটা হয়েছে বেজায় মাতাল, কাজকর্ম কিছুই দেখে না, সেই এলাহাবাদের কেল্লায় বসে কেবল টাকা ওড়াচ্ছে । ভেবেছিলুম নাতি শাজাহানট একটা মানুষের মতো মানুষ হয়ে বংশের নাম রাখবে, কিন্তু ভাই আমার কপালের দোষে নাতবেী ম'রে ইস্তক স্ত্রীর শোকে সে ও গেল পাগল হয়ে । ঔরঙ্গজেবটা এদিকে চালাকচতুর, কিন্তু হিন্দুদের ওপর তার বিষদৃষ্টি । হিছ প্রজা নিয়েই আমার কারবার, অথচ তাদেরই সে চটাতে চায় । এমন কল্পে কি রাজত্ব থাকে দাদা ? আমি সেই ষোলো বছর থেকে আজ পর্যন্ত যা-কিছু জমিজমা টাকাকড়ি করেছি সব আমার কটা নাতি-পুতি মিলে বরবাদ কল্পে দেখছি। কী যে করব ভেবে পাইনে। এখন ভালোয়-ভালোয় মানে-মানে মরতে পারলে বাচি ভাই বোগদাদি ।” ২৪৬
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।