এমন সময় দেখি ছপার থেকে দুটো হিস্থদের বুজরুগ আমাদের হাত নেড়ে ডাকাডাকি করছে— ‘গোলোকে যাবে গো ? গন্ধৰ্বলোকে যাবে গো ? জাফরের মুখে শুনেছিলুম এরা নতুন মানুষ পেলেই ভেড়া বানিয়ে দেয়। আমি আর তাদের দিকে না দেখে বেঁ-করে সতরঞ্চি চালিয়ে দিয়েছি! একেবারে গঙ্গা-পার হাবড়ার পুল কলকোত্ত হাজির! মস্থরটা তো আজব শহর কলকোত্তা দেখবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, কিন্তু আমি মসুরকে বললুম, এখানে বুজরুগি বড়ো কম চলে না— মানুষ ধরে এবা পাঠ করে রাখে, আর সময়মতো সেগুলোকে বলি দিয়ে বাজারে তাদের মাংস বিক্রি করে, নিজেরাও পাঠার ঝোল রোধে খায়।’ বলতে-বলতে দেখি দলে-দলে ছেলে-বুড়ে যত বাঙালি —কেউ কানে কলম গুজে, কেউ কেতাব বগলে –‘ওই দেখা যায় বরানগর, সামনে কাশীপুর, কলকাত কদর । —বলতে-বলতে ছুটে এসে এক-একটা বড়ো-বড়ো কেতাবখানা দপ্তরখানায় গিয়ে ঢুকছে বেশ মনের ফুর্তিতে, কিন্তু বেরিয়ে আসছে দেখি এক-একটা বোকা ছাগল ! ‘মসুর, জানো একে বলে কামরূপ কমিথ্যের ভেল্কিবাজি ; আর এই শহরে বাঙলার যত বড়ো-বড়ো বুজরুগের আসল আড্ডা। ওই দেখো গড়ের মাঠে একটা জাদুঘর, আর ওই আলিপুরে একটা চিড়িয়াখানা, আর ওই পুবদিকে দিঘির ধাবে একটা গে; লামখানা। আলিপুরে মানুষ-পাঠ জিয়োনো থাকে, ওই গোলামখানায় তাদের পোষ মানায়, আর মরবার পরে ওই জাদুঘরে তাদের হাড়গুলো আর ছালগুলো জমা রাখে । এখানে পা দিয়েছ কি বোকা বনেছ!’— বলেই আমি একদণ্ড আর সেখানে না থেকে একেবারে কালাপানির দিকে সতরঞ্চি চালিয়ে দিলুম। আকাশের ওপর দিয়ে পাখির মতো শো-শে উড়ে চলেছি, দেখি বাঙলাদেশের বুজরুগ তাদের দূরবীনগু:ল উঠিয়ে আমাদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। く8お
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।