পিসি তো তাই আমাদের পাঠিয়েছেন। ভয় কী ? গট হয়ে পালকিতে বসে থাকে, এইখান থেকে এক ডুব মারব আর ঠেলে তুলব পালকি একেবারে পিসির বাড়ি। কিন্তু দ্যখো বাবু, রাস্তার মধ্যে অনেক আশ্চয্যি দেখতে পাবে, দেখো যেন ভয় খেয়ো না । প্রথমে আসবেন কালা-কান-আংল-টানা, তারপর আছেন গামলচালা ফোপরা-জাল, তার পরে ঘণ্টাকর্ণ রক্তশোষা মাথায়-ছাতা, তার পরে শাখচূর্ণি মুক্তোকলাই, তারপর আছেন শুড়-ফুল-ফুল কাচুমাচু কল-কব্জা দাড়া-বাধা, আর রাঘববোয়াল পায়রা-চাদ । কিচ কিন্দে, এরা যদি আমায় ধরে ? কিছু ভয় নেই। আমরা আছি । ভয় পেলে আমায় ডেকো । বলেই –হ্যে রে রে দাদা রে’ বলে পালকি-যুদ্ধ, আমাকে নিয়ে তারা ডুব মেরেছে জলের ভেতর । প্রথমটা অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাইনে। খানিক পরে দেখি ফুকে শিশির মতো ছোটে-ছোটে। আলো জলের ভেতর দুধারে সারি-সারি ঝুলছে । এক-একবার জলের তোড়ে আলোগুলো হুড়হুড় করে গড়িয়ে ডাঙার দিকে যাচ্ছে আবার গড়গড় করে গড়িয়ে যেখানে ছিল সেখানে ফিরে আসছে । এমন সময় দেখি, এক কড়া তেল জলের ওপর যেমন ভাসতে-ভাসতে চলে তেমনি কী-একটা আমাদের দিকে পিছলে-পিছলে আসছে । অমনি কিচ কিন্দে ডেকেছে, ‘সামাল ! সামাল ! বায়ে ধর ভাই!’ র্স করে আমরা বা-দিকে একটা ডোবার ভিতর নেমে গেছি। সেখান থেকে দেখি— তেলটা ভাসতে-ভাসতে আমাদের ঠিক মাথার ওপরে এসে চারদিকে চারটে লম্বা-লম্ব আঙল বার করে জল খুটতে লাগল। তারপর আবার আস্তে-আস্তে আঙল-কটা গুটিয়ে নিয়ে একদিকে ভেসে চলে গেল । কিচ কিন্দে বললে, ‘দেখলে বাবু, উনিই হচ্ছেন কালা-কানাআংলা-টানা। ওঁর না আছে মাথা মুং , না আছে কান, না আছে চোখ ; থাকবার মধ্যে আছে কেবল এক আঙুল আর একরাশ ২৬১
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।