পালকির কাছ দিয়ে যখন এক-একবার ঘণ্টাকর্ণ এক-একটা হেলতে-তুলতে চলে যাচ্ছে তখন ইচ্ছে হচ্ছে— দিই একবার দুই কান ধরে টেনে। কিন্তু তখনি আবার মনে পড়ে যাচ্ছে এখন সব উল্টো কাজ করতে হবে ; যখন ইচ্ছে হবে চোখ বুজে ঘুমোই তখন থাকতে হবে চোখ চেয়ে ; যখন ইচ্ছে হবে শুই তখন হবে দাড়াতে ; যখন কান মলতে হাত এগিয়ে যাচ্ছে তখন হাতকে জোর কবে পিছিয়ে আনতে হবে। কাজেই আমি ভালো-মানুষটি হয়ে চুপ করে তাত-পা-গুটিয়ে চোখ বুজে বসে রয়েছি। এমন সময় দেখি আমাদের মেজ পুটির মতো একটি মাঝারি গোছের পুটিমাছ বা করে গিয়ে ঘণ্টাকর্ণের কানে দিয়েছে ঠোকর । যেমন কান ছোয়া আর কান অমনি জড়িয়ে ধরেছেন হাতির শুড়ের মতো পুটিমাছটিকে ! যেমন ধরা আর অমনি ঘণ্টার ভেতর পোরা : কাচের ঠাড়িলে পোষা মাছ যেমন ঘুবে-ঘুবে বেড়ায়, তেমনি দেখছি ঘণ্টার ভেতর পুটিমাছটি ঘুরে বেড়াচ্ছে— পালাবার পথ নেই ! আমি মাছটার কী হয় দেখবার জন্যে চেয়ে আছি । ‘আর দেখছ কি বাবু ! হজম হয়ে গেল বলে । যাও-না, ঘণ্টাব কানটা ধরে টেনে দেখো-না মজাট । কিচ কিন্দে, তুমি কেমন কবে জানলে যে কান মলবার জন্যে আমাব হাত নিশপিশ কবছিল, আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি।’ ‘বল নি বলেই জানতে পাবলুম। বললে কিছু শুনতেও পেতুম না, জানতেও পারতুম না । এখানে সব উণ্টে নিয়ম তা তো তোমাকে বলেই দিয়েছি।” এই কথা হচ্ছে এমন সময় দেখি পাচ দিক থেকে পাচটা শুড় নাড়তে-নাড়তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে— রক্তশোষ । তাব সবটাই অগুনতি ঠোট আর গাল আর জিভ— লাল টকটকে, শাদা ফ্যাকফ্যাকে । এক ক্রোশ থেকে তার ঠোট নাড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে— পট্-পট্-পট্, চকু-চক্-চক্ ! কিচ কিন্দে ডাকছে, ‘ডাইনে ধর ভাই, ডাইনে ? ২৬৫
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।