‘এই যে পিড়িতে ভাত বেড়ে রেখেছি’— বলে একটা পিড়ের ওপরে ডাল ভাত তরকারি সাজিয়ে পিসি আমাকে এনে দিলেন আমি তখন বুঝলুম, এখানে লোকে পাতায় বসে আর পিড়েয় ভাত খায় ! পিসির হাতের কলাইয়ের ডাল আর র্কাকড়ার ঝোল দিয়ে একপেট ভাত খেয়ে জলের ঘটিতে চুমুক দিয়ে দেখি এক ঘটি বালি —বেশ পরিষ্কার, তাতে আবার গোলাপের গন্ধ ছাড়ছে, আর বেশ মিষ্টি । ঢকৃঢক্ করে এক ঘটি বালি খেয়ে ধুলোয় হাত-মুখ ধুয়ে উঠলুম। পিসি একটি পান দিলেন– শুকনো যেন তালপাত । আমরা খাই কঁাচ পানের পাতা, এরা খায়, শুকনো তালের পাতা ! একপেট খেয়ে ঘুম পাচ্ছিল। কিচ কিন্দেকে বললুম, কিচ কিন্দে শোবার ঘরটা কোথায় ? একটু দুপুরবেলা ঘুমোতো হবে। বিকেলে তোমার সঙ্গে বেড়াতে যাব।’ আচ্ছা বাব’ –বলেই কিচ কিন্দে একটা ছাদে খাটিয়া পাতা রয়েছে সেইখানে আমাকে এনে বললে, “এই খাটিয়াতে একটু গড়াগড়ি দাও, আমি ঠিক সকাল পাচটার সময় তোমায় নিয়ে বেড়াতে যাব ।” বলেই কিচ কিন্দে চলে গেল। বিছানায় শুতে গিয়ে দেখি, খানকতক ইট পাতা রয়েছে ! তখন বুঝলুম এদের বালিস তোষক নরম নয় ; শক্ত ইট ; আর ছাদ হচ্ছে এদের ঘর, ঘর হচ্ছে ছাদ ! ইটের বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে কিছুতে ঘুম আসে না, তখন মনে হল দেখি উপুড় হয়ে শুয়ে। যেমন উপুড় হওয়া আর অমনি ঘুম —টিকটিকির মতো ইটের দেয়ালে হাত-পা ছড়িয়ে আরামে ঘুম ! এমন ঘুম কখনো হয়নি। যখন বেল পড়ে এসেছে তখন কিচ কিন্দে এসে বললে, ‘বাবু চলো একটু রথতলায় বেড়িয়ে আসি । "চলো”— বলে কিচ কিন্দের সঙ্গে এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে রথতলায় চলেছি, এমন সময় দেখি গোবিন্দর মা একটি ভোঁদড়-ছানা নিয়ে তাকে ঘুম পাড়াচ্ছে আর মুর করে ছড়া কাটছে— ধেই-ধেই চাদের নাচন । বেলা গেল চাদ নাচবি কখন ? २१9
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।