গাছে জল দিতে-দিতে, বেলা শেষে বাগানের কাজ সেরে চলে গেল। সবুজ ঘাসে, পুকুর পাড়ে, গাছের তলায়— কোনোখানে কোনো-কোণে একটু ধুলো, একটি কুটোও রেখে গেল না। রাত আসছে—বসন্তকালের পূর্ণিমার রাত। পশ্চিমে সূর্য ডুবছেন, পুবে চাদ উঠি-উঠি করছেন। পৃথিবীর এক পারে সোনার শিখা, আর-একপারে রুপোর রেখা দেখা যাচ্ছে । মাথার উপর নীল আকাশ, লক্ষকোটি তারায় আর সন্ধিপুজোর শাখ-ঘণ্টায় ভরে উঠছে। এমন সময় মায়াদেবী রুপোর জালে ঘেরা সোনার পালকিতে সহচরী সঙ্গে বাগান-বেড়াতে এলেন ; রানীকে ঘিরে রাজদাসী যত ফুলের পাখা, পানের বাট নিয়ে । প্রিয় সখীর হাতে হাত রেখে, ছায়ায়-ছায়ায় চলে ফিরে, রানী এসে বাগানের মাঝে প্রকাও সেই শালগাছের তলায় দাড়ালেন— বা হাতখানি ফুলেফুলে ভরা শালগাছের ডালে, আর ডান হাতখানি কোমরে রেখে । অমনি দিন শেষ হল, পাখিরা একবার কলরব করে উঠল, বাতাসে অনেক ফুলের গন্ধ, আকাশে অনেক তারার আলো ছড়িয়ে পড়ল । পুবে পূর্ণিমার চাদ উদয় হলেন– শালগাছটির উপরে যেন একটি সোনার ছাতা ! ঠিক সেই সময় বুদ্ধদেব জন্ম নিলেন– যেন একটি সোনার পুতুল, চাপাফুলে-ঘেরা পৃথিবীতে যেন আর এক চাদ । চারি দিক আলোয়-আলো হয়ে গেল— কোনোখানে আর অন্ধকার রইল না । মায়া মায়ের কোলে বুদ্ধদেব দেখা দিলেন, পৃথিবীর বুক জুড়িয়ে বুদ্ধদেব দেখা দিলেন– যেন পদ্মফুলের উপর এক ফোট শিশির— নির্মল, সুন্দর, এতটুকু। দেখতে-দেখতে লুম্বিনী বাগান লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠল, পাত্র-মিত্র অনুচর সভাসদ সঙ্গে রাজা শুদ্ধোদন রাজপুত্রকে দেখতে এলেন। দাসদাসীরা মিলে শাখ বাজাতে লাগল, উলু দিতে থাকল। স্বর্গ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে, আকাশে মেঘে-মেঘে দেবতার ছন্দুভি বাজছে, মর্তের ঘরে-ঘরে শাখঘণ্টা, পাতালের তলে-তলে, জগঝম্প, জয়ডঙ্কা বেজে উঠছে। বুদ্ধদেব তিনলোক-জোড়া তুমুল আনন্দের মাঝখানে জন্ম
- S బి