পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋষির হাত ধরে নালক পথে এসে দাড়িয়েছে, নালকের মা জুই চোখে আঁচল দিয়ে কাদতে-কাদতে ঋষিকে বলছেন– “নালক ছাড়া আমার কেউ নেই, ওকে নিয়ে যাবেন না।’ ঋষি বললেন– “দুঃখ কোরো না, আজ থেকে পয়ত্রিশ বৎসর পরে নালককে ফিরে পাবে। ভয় কোরো না ; এসো, তোমার নালককে বুদ্ধদেবের পায়ে সঁপে দাও । ঋষি মন্ত্র পড়তে থাকলেন আর নালকের মা ছেলের দুই হাত ধরে বলতে লাগলেন— ‘কুসুমং ফুল্লিতং এতং পগগহেত্বান অঞ্জলিং বুদ্ধ সেষ্ঠং সবিত্বান আকাসেমপিপুজয়ে। নির্মল আকাশের নিচে বুদ্ধদেবের পূজা করি; সুন্দর আমার (নালক) ফুল তাকে দিয়ে পূজা করি। ঋষি নালকের হাত ধরে বনের দিকে চলে গেলেন । আবার সেই বর্ধনের বন, সেই বটগাছের তলা ! গাছের নিচে দেবলঋষি আর সন্ন্যাসীর দল আগুনের চারিদিক ঘিরে বসেছেন, আগুনের তেজে সন্ন্যাসীদের হাতে ত্রিশূল ঝকঝক করছে। নিবিড় বন । চারিদিকে কাজল অন্ধকাব, কিছু আর দেখা যায় না, কেবল গোছা-গোছা অশখ-পাতায়, মোটা মোটা গাছের শিকড়ে আর সন্ন্যাসীদের জটায়, তপ্ত সোনার মতো রাঙা আলো ঝিক-ঝিক করছে— যেন বাদলের বিদ্যুৎ ! এই অন্ধকারে নালক চুপটি করে আবার ধ্যান করছে। মাথার উপরে নীলাম্বরী আকাশ, বনের তলায় স্থির অন্ধকার । কোনো দিকে কোনো সাড়া নেই, কারো মুখে কোনো কথা নেই কেবল এক-একবার দেবলঋষি বলছেন– “তার পরে ? আর নালকের চোখের সামনে ছবি আসছে আর সে বলে যাচ্ছে : ‘রাজা শুদ্ধোদন বুদ্ধদেবকে কোলে নিয়ে হরিণের ছাল-ঢাকা গজদন্তের সিংহাসনে বসেছেন, রাজার দুই পাশে চার-চার গণৎকার, রাজার ঠিক সামনে হোমের আগুন, ওদিকে গোতমী মা, তার চারিদিকে ধান-দূর্ব, শাখ-ঘণ্টা, ফুল-চন্দন, ধূপ-ধুনো। నవ8