শীতের থর-থর, পাতার মর্মর দিয়ে কেঁদে কেঁদে মিনতি করে তাকে ডাকছে— বাহিরে এসো, বাহিরে এসো, নিস্তার করো, নিস্তার করে! ত্রিভুবনে দুঃখের আগুন জ্বলছে, মরণের আগুন জ্বলছে, শোকে তাপে জীবন শুকিয়ে যাচ্ছে । দেখে চোখের জলে বুক ভেসে গেল, দুঃখের বান মনের বঁাধ ধসিয়ে গেল। আনন্দ— সে তো আকাশের বিছাতের মতো— এই আছে এই নেই ; সুখ– সে তো শরতের মেঘের মতো, ভেসে যায়, থাকে না ; জীবন— সে তো শীতের শিশিরে শিউলি ফুলের মতো ঝরে পড়ে ; বসন্তকাল মুখের কাল— সে তো চিরদিন থাকে না ! হায় রে, সাবা পৃথিবীতে দুঃখের আগুন মরণের চিতা দিনরাত্রি জলছে, সে আগুন কে নেবায় ? পৃথিবী থেকে ভয়কে দূর করে এমন আর কে আছে– তুমি ছাড়া ? মায়ায় আর ভুলে থেকে না, ফুলের ফাস ছিড়ে ফেলে, বাহিরে এসো— নিস্তার করে! ! জীবকে অভয় দাও ! নালকের প্রাণ, সারা পুথিবীর লোকের প্রাণ, আকাশের প্রাণ, বাতাসের প্রাণ বুদ্ধদেবকে দেখবার জন্য আকুলি-বিকুলি করছে। তাদের মনের দুঃখু কখনো বিষ্টির মতো ঝরে পড়ছে, কখনো ঝড়ের মতো এসে সোনার দেয়ালে ধাক্কা দিচ্ছে ; আলো হয়ে ডাকছে – এসো ! অন্ধকার হয়ে বলছে— নিস্তার করে । রাঙা ফুল হয়ে ফুটে উঠছে, আবার শুকনে পাতা হয়ে ঝবে পড়ছে— সিদ্ধার্থের চারিদিকে চোখের সামনে— জগৎ সংসারে হাসি-কান্ন জীবন-মরণ —রাতে-দিনে মাসে-মাসে বছরে-বছরে নানাভাবে নানাদিকে । একদিন তিনি দেখছেন নীল আকাশের গায়ে পারিজা ত ফুলের মালার মতো একদল হাস সারি বেঁধে উড়ে চলেছে— কী তাদের আনন্দ ! হাজার-হাজার ডানা একসঙ্গে তালে-তালে উঠছে পড়ছে, এক সুরে হাজার ঠাস ডেকে চলেছে— চল, চল, চলরে চল ! আকাশ তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে ; মেঘ চলেছে শাদা পাল তুলে, বাতাস চলেছে মেঘের পর মেঘ ঠেলে পুথিবী তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। নদী চলেছে সমুদ্রের দিকে, সমুদ্র আসছে নদীর দিকে— ২৯৭
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।