পাহাড় ভেঙে বালি ঠেলে। আনন্দে এত চলা এত বলা এত খেলার মাঝে কার হাতের তীর বিদ্যুতের মতে গিয়ে একটি হাসের ডানায় বি"ধল, অমনি যন্ত্রণার চিৎকারে দশদিক শিউরে উঠল। রক্তের ছিটেয় সকল গা ভাসিয়ে দিয়ে ছেড়া মালার ফুলের মতো তার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল— তীরে-বেঁধা রাজহাস। কোথায় গেল তার এত আনন্দ – সেই বাতাস দিয়ে ভেসে চলা, নীল আকাশে ডেকে চলা ! এক-নিমেষে ফুরিয়ে গেল পৃথিবীর সব আনন্দ, সব প্রাণ ! আকাশ খালি হয়ে গেল, বাতাসের চলা বন্ধ হয়ে গেল ; সব বলা, সব চলা, সব খেলা শেষ হয়ে গেল একটি তীরের ঘা পেয়ে! কেবল দূর থেকে – সিদ্ধার্থের কানের কাছে, প্রাণের কাছে বাজতে লাগল— কান্না আর কান্না ! বুক ফেটে কান্না ! দিনে রাতে, যেতে আসতে, চলতে ফিরতে, মুখের মাঝে, শান্তির মাঝে, কাজে-কর্মে, আমোদে-আহলাদে তিনি শুনতে থাকলেন– কান্না আর কান্না । জগৎ-জোড়া কান্না ! ছোটোর ছোটো তার কান্না, বড়োর বড়ো তাদেরও কান্না । দিবারাত্রি ক্রমাগত ঝড়বৃষ্টি, অন্ধকারের পরে সেদিন মেঘ কেটে গিয়ে সকালের আলো পুবদিকে দেখা দিয়েছে, আকাশ আজ আনন্দে হাসছে, বাতাস আনন্দে বইছে, মেঘের গায়ে-গায়ে মধুপিঙ্গল আলো পড়েছে ; বনে-বনে পাখিরা, গ্রামে-গ্রামে চাষীরা ঘরে-ঘরে ছেলে-মেয়েরা আজ মধুমঙ্গল গান গাইছে। পুবের দরজায় দাড়িয়ে সিদ্ধার্থ দেখছেন– আজ যেন কোথাও তুঃখ নেই, কান্না নেই! যতদূর দেখা যায়, যতখানি শোনা যায়– সকলি আনন্দ । মাঠের মাঝে আনন্দ সবুজ হয়ে দেখা দিয়েছে ; বনে-উপবনে আনন্দ ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে ; ঘরে-ঘরে আনন্দ ছেলে-মেয়ের হাসিমুখে, রঙিন কাপড়ে, নতুন-খেলনায় ঝিক-ঝিক করছে, ঝুম-ঝুম বাজছে ; আনন্দ– পুষ্পবৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে— লতা থেকে পাতা থেকে ; আনন্দ– সে সোনার ধুলো হয়ে উড়ে চলেছে পথে-পথে— যেন আবির খেলে । ২৯৮
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।