হেসে পিশাচের মতো সেই মূর্তি সিদ্ধার্থের সামনে পথ আগলে বললে— ‘আমাকে দেখ, আমি জরা, আমার হাতে কারো নিস্তার নেই— আমি সব শুকিয়ে দিই, ঝরিয়ে দিই, সব শুষে নিই, সব লুটে নিই! আমাকে চিনে রাখে হে রাজকুমার ! তোমাকেও আমার হাতে একদিন পড়তে হবে— রাজপুত্র বলে তুমি জরার হাত থেকে নিস্তার পাবে না ? দশদিকে সে একবার বিকট হাসি হেসে চেয়ে দেখলে অমনি আকাশের আলো, পৃথিবীর সবুজ তার দৃষ্টিতে এক নিমেষে মুছে গেল, খেত জ্বলে গেল, নদী শুকিয়ে গেল— নতুন যা কিছু পুরোনো হয়ে গেল, টাটক যা কিছু বাসি হয়ে গেল। সিদ্ধার্থ দেখলেন— পাহাড় ধসে পড়ছে, গাছ ভেঙে পড়ছে, সব ধুলো হয়ে যাচ্ছে সব গুড়ো হয়ে যাচ্ছে— তার মাঝ দিয়ে চলে যাচ্ছে শাদা চুল বাতাসে উড়িয়ে, ছেড়া কাথা মাটিতে লুটিয়ে পায়ে-পায়ে গুটিগুটি– অন্তহীন দন্তহীন বিকটমূতি জরা– সংসারের সব আলো নিবিয়ে দিয়ে সব আনন্দ ঘুচিয়ে দিয়ে সব শুষে নিয়ে সব লুটে নিয়ে একলা হাড়ে-হাড়ে করতাল বাজিয়ে । আর একদিন সিদ্ধার্থের সে মনোরথ– সিদ্ধার্থের সোনার রথ মৃত্যুমন বাতাসে ধ্বজপতাকা উড়িয়ে দিয়ে কপিলবাস্তুর দক্ষিণ হুয়ার দিয়ে আস্তে-আস্তে বার হয়েছে। মলয় বাতাস কত ফুলের গন্ধ, কত চন্দনবনের শীতল পরশে ঠাণ্ড হয়ে গায়ে লাগছে— সব তাপ, সব জ্বালা জুড়িয়ে দিয়ে। ফুল-ফোটানো মধুর বাতাস, প্রাণ-জুড়ানো দখিন বাতাস ! কত দূরের মাঠে-মাঠে রাখালছেলের বাশির মুর, কত দূরের বনের বনে-বনে পাপিয়ার পিউগান সেই বাতাসে ভেসে আসছে— কানের কাছে, প্রাণের কাছে ! সবাই বার হয়েছে, সবাই গেয়ে চলেছে— খোলা হাওয়ার মাঝে, তারার আলোর নিচে— দুয়ার খুলে, ঘর ছেড়ে । আকাশের উপরে ঠাণ্ডা নীল আলে, পৃথিবীর উপরে ঠাণ্ড আলো-ছায়, তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদুমন্দ মলয় বাতাস– ফুর-ফুরে দখিন বাতাস— জলে-স্থলে বনেউপবনে ঘরে-বাহিরে— সুখের পরশ দিয়ে,আনন্দের বাশি বাজিয়ে। 1ురి చి
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।