ধুলোমাখা কটা চুল বাতাসে উড়ছে— আকাশ-জোড়া ধূমকেতুর মতো ! দিকে-দিকে শোকের কান্না উঠেছে, ত্রিভুবন থর-থর কঁপিছে । মহামারীর গায়ের বাতাস যেদিকে লাগল সেদিকে পাহাড় চূর্ণ হয়ে গেল, পাথর ধুলো হয়ে গেল, বন-উপবন জ্বলে গেল, নদী-সমুদ্র শুকিয়ে উঠল। আর কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না ! সব মরুভূমি হয়ে গেছে, সব শুয়ে পড়েছে, মুয়ে পড়েছে, জ্বলে গেছে, পুড়ে গেছে, ধুলো হয়ে ছাই হয়ে উড়ে গেছে । জগৎ জুড়ে উঠেছে “মারীর আর্তনাদ, ‘মার’-এর সিংহনাদ, আব শ্মশানের মাংস-পোড়া বিকট গন্ধ ! তখন রাত এক-প্রহর । ‘মার’-এর দল, ‘মারী”-র দল উল্কামুখী শিয়ালের মতে, রক্ত আঁখি বাহুড়ের মতো মুখ থেকে আগুনের হলকা ছড়িয়ে চারি দিকে হাহা হুক্ত করে ডেকে বেড়াচ্ছে, কেঁদে বেড়াচ্ছে! আকাশ ঘুবছে মাথার উপব, পৃথিবী ঘুরছে পায়ের তলায় ঘর্ঘর শব্দে– যেন দুখানা প্রকাণ্ড জাতাব পাথব বুদ্ধদেবকে পিষে ফেলতে চেষ্টা কবছে ! "মাব’ দু-হাতে দুটো বিদ্যুতের মশাল নিয়ে বুদ্ধদেবকে ডেকে বলছে— ‘পালাও, পালাও, এখনো বলছি তপস্তা রাখো ! বুদ্ধদেব মার’-এর দিকে চেয়েও দেখছেন না, তাব কথায় কর্ণপাতও করছেন না ! 'মার’-এর মেয়ে ‘কামনা’ তার ছোটো তুই বোন ছলাকলা’কে নিয়ে বুদ্ধদেবের যোগভঙ্গ করতে কত চেষ্টা করছে— কখনো গৌতমী মায়ের রূপ ধরে, কখনো যশোধরাব মতো হয়ে বুদ্ধদেবেব কাছে হাত-জোড় কবে কেঁদে-কেঁদে লুটিয়ে পড়ে ! তার মন গলাবার ধ্যান ভাঙাবার চেষ্টায় কখনো তারা স্বর্গের বিদ্যাধরী সেজে গান গায়, নাচে, কিন্তু কিছুতেই বুদ্ধদেবকে ভোলাতে আর পারে না । বজ্রাসনে আজ তিনি অটল হয়ে বসেছেন, তার ধ্যান ভাঙে কার সাধ্য ! যে ‘মার’-এর তেজে স্বৰ্গ-মর্ত্য-পাতাল কম্পমান, যার পায়ের তলায় ইন্দ্র-চন্দ্র-বাযু-বরুণ, জল-স্থল-আকাশ– সেই মার’-এর দর্পচূর্ণ হয়ে গেল আজ বুদ্ধের শক্তিতে! মার আজ বুদ্ধেব একগাছি মাথার চুলও র্কাপাতে পারলে না, সেই অক্ষয়বটের একটি ७२९
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।