পাত, সেই পাথরের বেদীর একটি কোণও খসাতে পারলে না! বুদ্ধের আগে মার’একদণ্ডও কি দাড়াতে পারে! বুদ্ধের দিকে ফিরে দেখবারও আর তার সাহস নেই! দুই হাতের মশাল নিবিয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে ‘মার আস্তে-আস্তে পালিয়ে গেছে— নরকের নিচে, ঘোর অন্ধকারে চারি দিক কালো করে দিয়ে! বুদ্ধদেব সেই কাজল অন্ধকারের মাঝে নির্ভয়ে একা বসে রয়েছেন ধ্যান ধরে প্রহরের পর প্রহর । রাত শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু ‘মার’-এর ভয়ে তখনো পৃথিবী এক-একবার কেঁপে উঠছে— চাদও উঠতে পারছে না, সকালও আসতে পারছে না । সেই সময় ধ্যান ভেঙে ‘মার’কে জয় করে সংসার থেকে ভয় ঘুচিয়ে বুদ্ধদেব দাড়ালেন । তিনি আজ সিদ্ধ হয়েছেন, বুদ্ধ হয়েছেন, তুঃখেব শেষ পেয়েছেন। ডান-হাতে তিনি পৃথিবীকে অভয় দিচ্ছেন, বা-হাতে তিনি আকাশের দেবতাদের আশ্বাস দিচ্ছেন । র্তার সোনার অঙ্গ ঘিরে সাতরঙের আলো । সেই আলোতে জগৎ-সংসার আনন্দে জয়-জয় দিয়ে জেগে উঠেছে, নতুন প্রাণ পেয়ে, নতুন সাজে সেজে । তার পায়ের তলায় গড়িয়ে চলেছে নৈরঞ্জন নদীটি দুই কূলে শাস্তিজল ছিটিয়ে । যেখানে কাশী, সেখানে গঙ্গ একখানি ধারাল খাড়ার মতো বেঁকে চলেছেন। আর ঋষিপত্তনের নিচেই বকণা নদীর পাড় পাহাড়ের মতো শক্ত। তার গায়ে বড়ো-বডো সব গুহা-গর্তে যত জটাধারী বক-বেড়ালি-ব্রহ্মচারি ধুনি জালিয়ে ছাইভস্ম মেধি বসে রয়েছে। পাহাড়ের উপরে সারনাথের মন্দির । মন্দিরের পরই গাছে-গাছে-ছায়া-করা তপোবন । সেইখানে সত্যি র্যারা ঋষি তপস্বী তার রয়েছেন । হরিণ র্তাদের দেখে ভয় খায় না, পাখি তাদের দেখে উড়ে পালায় না । তারা কাউকে কষ্ট দেন না । কারু ঘুম ভাঙবার আগেই তারা একটিবার বন থেকে বেরিয়ে নদীতে স্নান করে যান ; দিনরাতের মধ্যে তপোবন ছেড়ে তারা আর বার হন না। দেবলঋষি নালককে নিয়ে এই তপোবনের একটি বটগাছের তলায় আজ ক’মাস ধরে রয়েছেন ! ৩২৩
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।