জগদবিখ্যাত, তার সঙ্গে ফিরিঙ্গী সাহেব টক্কর দিতে চায় ? মহাল থেকে মহল্লায় মহল্লায় জাহানগীর বাদশার পেয়াদ ছুটিল , দিল্লীর ছোটো বড়ো নকশাওয়ালা, ওস্তাদ, কারিগর, নামজাদা তসবীরওয়াল। মিনা বাজারে একত্র হলে বাদশা তাদের মাঝে সেই বিলাতি ছবিখানা ফেলে দিয়ে নকল করিবার হুকুম দিলেন— আসলের সঙ্গে যেন তিল তফাৎ না হয়— হিন্দুস্থানের পচিশ জন প্রসিদ্ধ কারিগর একমাস ধরে সেই তসবীরের নকল ওঠাইতে লাগিল। দিনের পর দিন, অল্পে অল্পে ক্রমে ক্রমে বিলাতের সেই দুধে আলতায় সুন্দর রঙ সোনার তারের মতন চিকন কেশ ফরাসী ছিটের লতাপাতা ওস্তাদের কলমের মুখে গজদন্তের পটের উপরে অবিকল ফুটে উঠিল, কেবল সমুদ্রের মতো নীল চোখের তারা ছটির কাছে সমস্ত কারিগরের সব কৌশল ব্যর্থ হল । তসবীরের চোখ কোনোটার হল তামড়া আভা, কোনোটার কালো, কোনোটার বা ফিরোজার মতো নীল । বাদশা মহা ক্ষাপ্পা হয়ে উঠিলেন, কারিগরদের উপর ধমক, সোরসরাবত চলিতে লাগিল। যে বিলাতি ছবির জন্যে এতটা কাণ্ড, জগতের জ্যোতি নূরজাহান বেগম সে বিলাতি ছবিটা একবার অন্দর মহলে আনিয়ে দেখিলেন, তার পরে বাদশাকে বলিলেন– “লাহোরে সরিফ ওস্তাদ বলে এক তসবীরওয়ালা আছে, সে একদিন ইচ্ছা করলে এ ছবির অবিকল নকল ওঠাতে পারে।” বাদশার কাজে সরিফ ওস্তাদ দিল্লীর দরবারে হাজির হল ; বাদশা তাকে ডেকে বললেন– এ তসবীর তুমি কতদিনের মধ্যে নকল করে দিতে পার ;– ওস্তাদ বললে— জাহঁাপান তিন রোজ, কিন্তু খোদাবন্দ বুড়ো হয়েছি চোখের আর তেজ নাই কি জানি চুক্ হতে পারে! উজীর সাহেবের ঘরে এক ছোকরী আমার কাছে তসবীরের কাম অনেক দিন ধরে শিখেছিল, এখন তার জোয়ান বয়েস, সেই অবিকল এই তসবীরের নকল ওঠাতে পারে। তার হাতও যেমন দোরস্ত, অঁাখেরও তেমনি তেজ আছে – বাদশ আবার নূরজাহানের শরণাপন্ন হইলেন। বেগম বলিলেন— আমার বাপের বাড়ির এক ছোকরী এই কাম xGL o
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।