পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জানে বটে ; কিন্তু এখন সে বড়োলোকের ঘরে বঁাদি হয়েছে। সে যে তসবীর ওঠাতে রাজি হয়, এমন তো বোধ হয় না, দেখি চেষ্টা করে। বেগমের কাছে আশ্বাস পেয়ে জাহানগীর অনেকটা নিশ্চিন্ত হইলেন। তিন দিন পরে বাদশার হুকুম তামিল হল। ছবির নকল প্রস্তুত, এবার নকলে আসলে একটুও প্রভেদ নাই। সেই চোখ, সেই রঙ। এবার সাহেবের হার হল, বাদশা যখন দরবারের মাঝে হাজার হাজার আমির ওমরাহ নকশাওয়ালা কারিগর লোকলস্করের সামনে সাহেবের দুই হাতে দুইখানি ছবি দিয়ে বলিলেন “তোমার কোনটা চিনে লও” সাহেব উত্তর দিলেন, জগজয়ী জাহানগীর যখন আমার বিপক্ষে তখন জয়ের আশা তো ছিলই না, এখন জগজ্যোতি নুরজাহানের কৃপা ভিন্ন আসলে নকলে ভেদ বুঝিবার সাধ্যই-বা কাহার ?” সাহেব এক ঢিলে দুই পাখি মারিলেন— বাদশা বেগম দুজনকেই খুসি করিয়া দিলেন— তিনি বেশ বুঝিয়াছিলেন যে, মোগল বাদশাহের দববারে কথার দাম কাচা মাথাটার চেয়ে অনেক বেশি– সাহেবকে রীতিমত খেলাত দিয়া জাহানগীর দরবার ভঙ্গ করিলেন । দিল্লীর ছোটো বড়ো সকলেই যখন হিন্দুস্থানের জয়ে এবং সাহেবের চাটুবাদে উৎফুল্ল হইয়া ঘরে চলিয়াছে, কেল্লার ফটকে নাকরাখান নহবতের বাশিটা আজ যেন অন্য দিনের চেয়ে একটু যখন জোরে জোরে বাজিয়া উঠিয়াছে, তখন অন্দরমহলে বাদশার হুজুরে নূরজাহান বেগম দরবার জানাইলেন “খোদাবন্দ বাদীর জন্য কিছু বখশিসের হুকুম হয়” ! বাদশা সেই দিনের ছাপা একটি নতুন মোহর বেগমের হাতে দিয়া বলিলেন, “বিবি, তোমার ইনাম এবার এই!” মোহরের একপিঠে অপূর্ব সুন্দরী নূরজাহানের মূর্তি লেখা আছে, আর-এক পিঠে লেখা আছে– জগতের জ্যোতি নূরজাহানের সম্পর্কলাভে স্বর্ণের গুণ আজ শতগুণ বৃদ্ধি পাইল । 99)