পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংবাদ হুজুরে পৌঁছিয়া দেওয়া তাহার একটা বিশেষ লাভজনক কাজ ছিল। সেজন্য মীনাবাজারে উপস্থিত হইবার জন্য মোগল অন্তঃপুর হইতে রানী ও বেগমদিগের নামে পত্র বিলি করিবার সময় যোধপুরের নূতন বৌরানীর পত্রখানি নিজ হস্তে লিখিয়া জেবুন্নেসা যখন রোশনকে রওয়ানা করিবার জন্ত দিলেন তখন সে পত্রখানি, বাদশার হাতে আসিয়া পড়িল। বাদশাহ সেখানি যত্নে খুলিয়া পাঠ করিলেন এবং নিজের লোক দিয়া সেখানি অবিলম্বে যোধপুরে প্রেরণ করিলেন । পত্র যথাসময়ে ঠিকানায় পৌছিল এবং সুরসিংহ নবপত্নীকে লইয়। দিল্লীমুখে রওনা হইলেন। সে বারের নওরোজ যেমন হইতে হয় ! দিল্লী শহরে নাচ গান আমোদ আহলাদের যেন ফোয়ার ছুটিয়া গেল। অবিশ্রাস্ত আমোদের নেশায় নওরোজের প্রথম আট দিন যেন নিমেষের মধ্যে কাটিয়া গেল । নয়দিনের দিন বৈকালে মীনাবাজার। সে দিন প্রাতঃকাল হইতে রোশন বঁাদির বিশ্রামের আর অবসর ছিল না, সে দিন সাহাজাদীর সাজিবার শখ এমনি বাড়িয়া উঠিল যে রোশনর্বাদি নিজে যে একটু সাজিয়া গুজিয়া ফিট ফাট হইয়া লইবে এ অবকাশটুকুও মেলা ভার। সহাজাদীর এক ছাদের পর অন্ত ছাদে চুল বাধিতে, একটার পর আর একটা পেশোয়াজ ওড়নী ও অলংকার প্রভৃতি নানা খুটিনাটি বাহির করিতে রোশন অস্থির হইয়া পড়িল। মহলের দাসী বাদির আজ সাহাজাদীর সাজ ও ভাবভঙ্গি দেখিয়া অবাক হইয়া গেল ও তাহাদের মধ্যে একটা কান-ঘুষ পড়িয়া গেল। সকলে বলাবলি করিতে লাগিল বড়ো লোকের মেজাজ খুশি হতেও যতক্ষণ আবার খারাপি হতেও ততক্ষণ। দেখ আজ কার কপালে কী আছে ? রোশন জেবুন্নেসার কাছে ছুটি পাইয়া সেই সময়ে সেই দিক দিয়া যাইতেছিল, সে বলিয়া উঠিল— কার কপাল ভেঙেছে আমি জানি । এই বলিয়া রোশন দেলজানের কানে কানে কি ফিসফিস্ কfগ মীনাবাজারের দিকে চলিয়া গেল ।