কেমন একটু সঙ্কুচিত হইয়া পড়িলেন, পরে কঞ্চকীর মুখে যখন শুনিলেন রাজা আজ মৃত্যুরূপে রাজমহলে ক্রীড়া করিতেছেন তখন জয়ন্ত্রী হাসিমুখে কষ্ণুকীকে বিদায় দিয়া বেশ-গৃহে প্রবেশ করিলেন। রাত্রির অন্ধকার সন্ধ্যার সমস্ত রক্তরাগ মুছিয়া দিকদিগন্তে একটা কালিমার প্রলেপ দিয়াছে। শত সহস্র প্রদীপের রশ্মিতে বোধ হইতেছে যেন সমস্ত রাজপ্রাসাদটায় কে আগুন ধরাইয়া দিয়াছে। রাজা রাজমিহির নববস্ত্রে, নবরত্ন অলংকারে দীপ্যমান দ্বিতীয় সূর্যের মতো প্রমোদভবনে বিরাজ করিতেছেন। কোথাও আর সারা দিবসের বীভৎস লীলার চিহ্নমাত্র নাই— সুমার্জিত গৃহভিত্তিতে বারিসিঞ্চিত পুষ্পকাননে কোথাও কোনোখানে নয়। দোর্দণ্ড প্রতাপ রাজার আজ্ঞায় অঙ্গন-প্রাঙ্গণ শোণিতকৰ্দমে পিচ্ছিল হইয়া গেল, আবার তাহারই আজ্ঞায় এক নিমেষে প্রাসাদ হইতে যৎসামান্ত রক্তের রেখাটুকু পর্যন্ত দূরীভূত হইল। এই সদ্য প্রক্ষালিত রাজ-গৃহাঙ্গনে পদার্পণ করিতেই জয়ন্ত্রী মৃত্যুর একটা সুতীব্র শীতলত নিজের সমস্ত দেহে অনুভব করিয়া স্তম্ভিত হইয়া দাড়াইলেন ; পরে লুতাতন্তুর উপরে নিহিত শিশিরকণার মতো নিজের অতি সূক্ষ্ম বক্ষোবাসে চিত্রিত শুভ্র দুইখানি বুদ্ধচরণে দৃষ্টি রাখিয়া ধীরে ধীবে রাজসদনে প্রবেশ করিলেন। এই বুদ্ধচরণাঙ্কিত শুভ্র বক্ষোবাস জয়ন্ত্রীর বিবাহের যৌতুকস্বরূপ পিতৃগৃহ সিংহল হইতে আসিয়াছিল। হিন্দুরাজকুলসূয মিহিরেব মহিষী বক্ষে বুদ্ধের চরণাঙ্ক ধারণ করিবেন এটা রাজার অসহ্য ছিল ; সুতরাং ওই বস্ত্রখণ্ড পরিধান সম্বন্ধে জয়শ্রীর উপর তিনি কঠোর নিষেধ প্রচার করিয়াছিলেন। আজ সহসা উৎপলবর্ণ পাণ্ডুবসনা জয়ন্ত্রী যখন রাজার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইলেন তখন বানীর নিরাভরণ বক্ষে একমাত্র আভরণ সেই পদাঙ্ক দুইখানির উপরেই রাজার প্রথম দৃষ্টি পড়িল । ক্র রকর্ম রাজা মিহির আসন হইতে গাত্রোথান করিয়া w8o
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।