করিয়া রাজা যখন মন্দির নির্মাণ স্থগিত রাখিতে আদেশ দিলেন, তখন রাজমন্ত্রীগণের— বিশেষত পণ্ডিতমহলে বিস্ময়ের সীমা রহিল না। দীনের কুটির ত্রিভুবনেশ্বরের দেউল হটাইয়া দিয়াছে এ কথা দেখিতে দেখিতে যখন রাজ্যমধ্যে প্রচার হইয়া গেল, তখন চর্মকারও সেটা শুনিল নিশ্চয় । সে “এমনি রাজাই তো চাই” বলিয়া সজোরে চামড়ার উপরে গুণ ছুচের মুখটা বসাইয়া দিল। পরে গম্ভীরভাবে নিজের কাজকর্ম গুছাইয়া সারিয়া সরাসর রাজদ্বারে উপস্থিত হইল । মন্ত্রীবর চর্মকারের নাম শুনিয়া বড়োই জ্বলিয়া গেলেন । র্তার নিজের সম্বন্ধে অপটু অপরিণামদর্শী’ প্রভৃতি যে বিশেষণগুলা রাজা এইমাত্র প্রয়োগ করিয়াছেন সেগুলা তখনো তিনি পরিপাক করিয়া উঠিতে পারেন নাই । সুতরাং চর্মকার রাজসম্ভাষণপ্রার্থী ! তাহার প্রবেশ আজ্ঞা হউক। এ কথাটা তিনি একটু বিক্রপের স্বরেই রাজগোচরে নিবেদন করিলেন। রাজাও যে সেটুকু বুঝিলেন না তাহা নয়, তিনি সভাপণ্ডিতগণের প্রতি একটু উপহাস কটাক্ষ করিয়া বলিলেন– “মন্ত্রীবর ! ভুল করিতেছেন। শাস্ত্রমতে চর্মকারকে রাজপ্রাসাদে আসিতে নাই। সুতরাং রাজা এবং রাজপুরুষগণকেই তাহার নিকট যাইতেই হইবে।” রাজা সিংহাসন ছাড়িয়া উঠিলেন। অনন্তোপায় রাজপুরুষগণকেও সঙ্গে সঙ্গে রাজদ্বার পর্যন্ত উজান বাহিয়া চর্মকারের হুজুরে হাজির হইতে হইল । চর্মকারকে ঘিরিয়া রাজপ্রাসাদের সিংহদ্বারে শত সহস্ৰ লোকের জনতা ! রাজাকে আসিতে দেখিয়া তাহারা সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া স্থই হাতে রাজদ্বারের ধুলা গায়ে মাখিয়া আনন্দ গদগদ কণ্ঠে বলিতে লাগিল—“আহা একেই তো বলে রাজা ! তুমি বিনি মূলে আমাদের সকলকে কিনে নিলে ।” চর্মকার নিজের জমির পাটাখানা রাজার চরণে ধরিয়া দিয়া বলিল— “রাজ ! এরা জোরই করে। এর বোঝে না যে আমরা দীন দুঃখী পথের কুকুরের চেয়ে ছোটো নয় আর ○88
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।