সমস্ত আকাশের নীলিমা এক নিমেষে মুছিয়া দিয়া একটা ধূসর বিষয় ছায়া দিনের পর দিন জলস্থল-আকাশ আক্রমণ করিয়া সুদীর্ঘ দুঃস্বপ্নের মতো জাগিয়া আছে। চাষীর মুখে গান বন্ধ, দেশ জুড়িয়া একটা স্তব্ধ প্রতীক্ষা! এই সংকট ও সংশয়ের মাঝখানে বাপুষ্ট বনে হঠাৎ এক রাত্রিশেষে লোকের কোলাহল এবং ঢোলের বাদ্য শুনিয়া আমি একটু অবাক হইয়া গেলাম। একবার মনে হইল লোকগুলা আমাকেই পাকড়াও করিতে আসিয়াছে । খাজনা কিছুতেই মাপ দিব না মনে-মনে এই স্থির কবিয়া মঠধারীকে ডাকিয়া পাঠাইলাম। তাহার মুখে শুনিলাম, লোকেবা কপোতেশ্বরের পূজা দিতে আসিয়াছে। লোকগুলা দুর্ভিক্ষের হাত এড়াইবাব জন্য পূজা দিতে আসিয়াছে আমার হাত এড়াইবার জন্য নয়। মঠধাবীর কাছে এই আশ্বাসট পাইয়া অনেকটা নিশ্চিন্ত হইলাম ; এবং স্বচক্ষে একবার ফসলের অবস্থা ও আকাশের ভাবগতিক দেখিলার জন্য বন ছাডিয়া মেঠে। রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িলাম । সন্ধ্যার সময় অতিথশালায় ফিরিয়া আসিয়াড়ি ; লোকেরা পূজা দিয়া ফিরিয়া গিয়াছে ; বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির সঙ্গে একটা কনক নে হাওয়া দেবদারু বন কাপাইয়া বহিতেছে । বৰফ পড়িবাব উপক্রম দেখিয়া আমি আগুন জ্বালাইলাম এবং কম্বলখন পতিয়া তোরঙ্গ হইতে বহুকষ্টে পাওয়া কবি কহলনের বাজতলঙ্গণীখানা বাহির করিয়া পড়িতে আরম্ভ করিলাম। প্রতাপাদিত্যের পুত্র জলে কা বত্রিশ বৎসর রাজ্যশাসন করিয়া স্বর্গে গমন করিলে তৎপুত্র তুজ্ঞান দিব্যপ্রভাবসম্পন্ন বাঙ্গী বাক্দেবীব সহিল, মেঘ ও বিদ্যুতের মতো স্নেহবারিতে দীন প্রজার মন উৎফুল্ল কপিয়া, ফলে ফুলে সুশোভিত ইন্দ্রধনুর ন্যায় নানা বর্ণ বিচিত্র রাজ্যখণ্ড, বহুদিন ধারণ করিয়া রহিলেন । এই সময়ে সহসা ঘোররূপা দুর্ভিক্ষ-রাক্ষসী যখন রাজারানীর যশ-চন্দ্রিম গ্রাস করিবার জন্যই যেন রাজ্যমধ্যে উপস্থিত হইল, তখন রাজভাণ্ডার শূন্ত করিয়া বহু চেষ্টাতেও প্রজাগণ মারাভয় হইতে রক্ষা পাইল না। দেখিয়া মনোদুঃখে রাজা প্রাণত্যাগ করিলেন \©8ግ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।