মৃত্যুকালে নিঃস্ব পিতা গেীভূ-রাজকুমারীগণের স্বাভাবিক গৌরকান্তির উপরে অনির্বচনীয় পাণ্ডুপ্রভাটুকু ছাড়া আমাকে আর-কিছুই দিয়া গেলেন না বটে কিন্তু নির্বাণের মুখে প্রদীপের সবটুকু যেমন ক্ষীণ একটি শিখায় আপনাকে জাগাইয়া তোলে তেমনি সুবৃহৎ গৌড়-রাজপরিবারের যত মহিমা, যত কালিম সমস্ত আমার মুপাণ্ডুর গৌড় তমুখানির অন্তর বাহির আশ্রয় করিয়া নূতন তেজে শেষবার জ্বলিয়া উঠিল। সে জালায় আমি নিজেও জ্বলিয়াছিলাম পরকেও জ্বালাইয়াছিলাম । যে দেবীর নামে আমার নাম তিনি ছিলেন দেবী গৌরী— আর আমি ছিলাম মৃত্যুর ন্যায় পাণ্ডুগ্রী, শোণিতপিপাসিনী একটা রাক্ষসী । কিন্তু তবু আমাকে লোকে বলিত গৌরী-– প্রেয়সী— দেবী ! যষ্টি-সহস্র অভিশপ্ত সগর-সন্তানের মতো আমার পিতৃগণ যখন আমার নারী-জীবনের ক্ষীণ ধারাটুকুর দিকে সতৃষ্ণ চাহিয়া ছিলেন তখন আনি সেটিকে সুপবিত্র সাণরসঙ্গমের দিকে না বহাইয়া দিয়া, গৌড় বাদশাহের রঙমহালের দিকেই লইয়া চলিলাম— কুটিল পঙ্কিল পথে, তরঙ্গায়িত যৌবনের উদাম শক্তিবলে সমস্ত বাধাকে বিচূর্ণ করিয়া। হায় ! প্রমোদ এবং বিলাস-বিচিত্র যবনিকার অন্তরালে সে দিনের কথা আমার আজও মনে পড়ে— যেদিন আমার গৌরী নাম গোরিয়া এই তিনটি অক্ষরের মধুর মদির অলস ছন্দের মাঝে আপনাকে প্রথম ধরা দিয়াছিল । তারপর যেদিন গৌড়ের দিক্চক্রবাল অগ্নিদাহ আর চিতা-ধূমে বেষ্টন করিয়া, দুর্ভিক্ষ আর মহামারী প্রলয় তাণ্ডবে ভীষণ আবর্তের মতো আসিয়া দেখা দিল, সেদিন আমি বা কোথা রহিলাম, কোথা বা রহিল আমার সে স্বপ্নরাজ্যের স্বর্ণসিংহাসন ! ঘূর্ণ জলে দীপালির প্রদীপটির মতো আমার কম্পমান জীবনটুকু লইয়া সহসা একটা অভলের তলে নামিয়া গেলাম । \©¢ፄ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৭৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।