হজুরের দৃষ্টি কর্মচারীর দিকে পড়বামাত্র তিনি দুই নম্বরকে হাজির করলেন। মজলিসে প্রবেশ করেই নম্বর-দুই বাতির চারিদিকে ভ্রাম্যমাণ একটি মশাকে গ্রাস করে ফেললেন ; এবং হুজুরকে একবার মক্মক্ শব্দে আশীৰ্বাদ করেই আকাশের দিকে দুই চক্ষু পাকিয়ে পুষ্পমাল্যের থালার উপরে গম্ভীর মূর্তি ধরে বসলেন। সকলের মুখে কেমন একটু নিরাশ ভাব দেখা গেল এবং মজলিসের বাহিরের লোক যারা নিমন্ত্রণ পায় নি তারা যেন একটু টিটকার দেবার উদ্যোগ করলে । সকলকারই মনে হচ্ছে পাখি সম্বন্ধে কোথায় যেন একটু গোল রয়ে গেল। হুজুর পর্যন্ত কেউ র্তারা পাখিকে কখনো দেখেনও নি, দেখবার চেষ্টাও পান নি । সুতরাং সবাই বিরক্ত হয়ে বসলেন এবং দুই জীবের মুর লয় তান নাদ নিনাদাদি সম্বন্ধে বিচার ও মুখ্যাতির চূড়ান্ত করে ও বিদেশীরা যে পাখির মুখ্যাতি করেছেন তাকে সম্পূর্ণ কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়ে মজলিস ভঙ্গ করলেন । পণ্ডিত এই সময় কর্মচারীর কানে গিয়ে পরামর্শ দিলেন– ‘ওহে, এ-দুটোকে হুজুরে কী বলে হাজির করলে ? এর একটি গোবৎস আর একটি কূপমণ্ডুক— কোনো পুরুষে পাখি নয়! একটিকে গো-রক্ষিণীতে পাঠিয়ে দাও, আর-একটি নিয়ে তুমি মশাবংশকে ধবংস করো গিয়ে । কর্মচারী এতগুলো কথার জবাবে বললেন– চুট্ !’ মজলিসের দেউড়ির বাইরে সেই কচি মেয়েটি দাড়িয়ে ছিল । সে কর্মচারীকে আসল পাখির খবর দিতেই এসেছিল। কিন্তু পণ্ডিতের দুরবস্থা দেখে সে আর কর্মচারীর কাছে যেতে সাহসই পেলে না । হুজুর ঘরে এসে মিথ্যার ঝুড়ি বিদেশী বইগুলোকে জালিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন । কর্মচারীর ঘর থেকেও সেদিন অনেক রাত্রে একটু কাগজ-পোড়া গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল আর বুদ্ধ-বৃহস্পতি সভায় পুথিরক্ষককে ওখান থেকে ঠিক তেমনি সময়েই পকেটে হাত দিয়ে হাসিমুখে বার হতে দেখা গিয়েছিল। \©ኳጫ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।