হানা দিলেন । দেখতে দেখতে দিকে দিকে আগুন জ্বলে উঠল। কারাগারের অন্ধকার সে আগুনের অভিায় সূর্যোদয়ের মতো রাঙা হয়ে উঠল, আর সোনার রাজপুরী তার উত্তাপে গলে গেল। হিরণ্য তোরমান দুই ভাই রক্তের আবিরে রাঙা হয়ে পাশাপাশি চললেন কুমারকে দেখতে— বীর যেমন করে চলে বীরের দিকে । তারপর সেইদিন সন্ধ্যা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের রক্তরাগের সঙ্গে সঙ্গে তুই রানীর ললাটের সিন্দুর মুছে দিয়ে কাশ্মীর দেশের উপর থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিম সমুদ্রের পরপারে চলে গেলেন। রানীদের হুকুমে বিদ্রোহীর পথ আগলে রাজপুরীর সিংহদ্বার ঝনঝন দিয়ে বন্ধ হল। বিদ্রোহীর শাস্তি নিয়ে প্রবরসেন নির্বাসনে চলে গেলেন, অঞ্জনার কোল, কাশ্মীরের সিংহাসন দুই শূন্য রইল। আমি শুধোলেম, আর তোবমানি টাকার কী হলো ? পণ্ডিতজী বললেন— সেই অভিশপ্ত টাকা কাশ্মীরের আর কেউ চালাতে সাহস পেলে না। রানীদেব হুকুম নিয়ে রাজমন্ত্রী সেই টাকায় কাশীতে একটা স্নান-ঘাট বানিয়ে দিলেন । সে ঘাটও প্রস্তুত হবার ঠিক পরেই সহসা একদিন রসাতলে প্রবেশ করেছিল, শোনা যায় লোকমুখে, ইতিহাসে কিন্তু তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না— বলে পণ্ডিতজী চুপ করলেন। আমি তাকে কিছু ফল উপহার দিয়ে বললেম— কাল আবার গল্প বলতে হবে, আসবেন । পণ্ডিত ফলের ঝুড়িতে কম্বল ঢাকা দিয়ে বললেন– কাল আপনাকে মাতৃগুপ্তের ইতিহাস শোনাব, আজ বিদায় হই ।
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।