গেল। তোতাপাখি গিয়ে বক্তা আর শ্রোতা দুইজনের মধ্যে বসে রিপোর্ট নিতে লাগলেন। এইবার রক্তমাখা কটা-চুল সিংহ বাকড়া মাথা ঝাড়া দিয়ে গম্ভীর মুখে সভার মধ্যিখানে উঠে বলতে শুরু করলেন। যেন মেঘ ডাকছে এমনি গুরু-গম্ভীর আওয়াজে সিংহনাদ করে তিনি মানুষের অত্যাচার আর অবিচারের কথা বর্ণনা করে বললেন —‘এই মানুষের হাত থেকে বঁচিবার এক রাস্তা, আর সে রাস্তা তোমাদের জন্তে খোলা রয়েছে ! এসে আমার সঙ্গে জনমানবশূন্ত সুদূর খাণ্ডব বনে। অতি নির্জন সে স্থান, তেপান্তর মাঠে ঘেরা, মরুভূমির মধ্যেকার ওয়েসিস সেটি, বর্বর মানুষগুলো তার ত্রিসীমানায় যেতে পারে না এমন দুর্গম ভীষণ সে স্থান ! মানুষের যত বড়াই লোকালয়ের চারখানা দেওয়ালের মধ্যে, ফঁাকায় আর নিরালায় পেলেই আমরা তাদের ঘাড় মটকে রক্তপান করি।” এই সময় বাঘের দিকে চেয়ে একটা গোরু দুবার গলা-খাকানি দিল, সিংহ একটুখানি মুচকে হেসে বললেন– এ কথা আমি কাউকে ইঙ্গিত কিংবা ঠেস দিয়ে বলছি নে, সত্যিই বলি, মানুষের মধ্যে সিংহবিক্রম এমন কে আছে যে রণে বনে আমাদের সামনে এগোতে পারে! সুন্দরবনের বাঘ এই শুনে কাষ্ঠহাসি হেসে কাটাগোফ দুবার মুচড়ে একবার ভাঙা গলায় বাহবা বলে হাততালি দিলে। তারপর সিংহ মরুভূমির চমৎকার শোভা, শান্তি, মুক্তি আর নির্ভয় আনন্দময় জীবনের একটি বিচিত্র বর্ণনা দিয়ে বক্তৃতা বন্ধ করলেন। হাতি উঠে প্রস্তাব করলেন যে, সকলকে নিয়ে ছোটোনাগপুরে নাগা পর্বতে যাওয়াই ঠিক, কেননা সেখানে হাতি-চোখের গাছ যথেষ্ট পাওয়া যায়, দাতে চিবিয়ে খাবার সামগ্রীরকোনোদিন কারুর অভাব হবে না, তবে খাবার জলের একটু কষ্ট হবে, কিন্তু যদি উট মোষ হাতি আর মশা এরা মশক কুঁজে পিচকিরি আর নল ভরে ভরে পাহাড়ে তুলে দেন, তবে জলার জল সমস্তই পাহাড়ে উঠবে জালা জাল, জীবের জলকষ্টও সঙ্গে সঙ্গে দূর হবে।’ "שילס
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।