হাতির প্রতিবাদ করে জল-হস্তী বলে উঠলেন– “জলার জল জলাতে রাখলেই মঙ্গল, মিষ্টিও থাকবে ঠাণ্ডাও থাকবে, নয় তো হাতিরা সবাই গিয়ে জলার জল তুলতে নামলে জল কাদায় এমন ঘোলা হবে যে, সে জল কারুর আর মুখে দিতে হবে না।’ কুকুর এই সময় হঠাৎ মাথা গরম করে চেচিয়ে উঠল— ‘তোমরা যাই বল, আমি তো বলি, শহরে থাকায় যেমন মুখ এমন আর কোথাও নয় ? গো-বাঘ, নেকড়ে আর হেড়েল তিনজনে পড়ে কুকুরের কোটের লেজ ধরে টেনে বসালে। তখন সুন্দরবনের বাঘ হুঙ্কার দিয়ে, মাচায় লাফিয়ে উঠে ন্যাজ আফসে বক্তৃতা আরম্ভ করলে— ‘আমরা লড়াই দেব, খুন জখম রক্তপাত করব, মানুষের জাতকে জাত পৃথিবী থেকে লোপ করে দেব ! এসে সব বড়ো বড়ো জানোয়ার সেনাপতি হয়ে এগিয়ে এসো, আর ছোটোখাটো জীবজন্তু, তোমরাও ভয়ে পিছিয়ো না। ছোটো হলে কী হয়, গ্রীসের ইতিহাস যদি পড়ে দেখ তবে দেখবে অতবড়ো 'টেরাগোনা', তাকেও জনকতক খরগোস মিলে রসাতলে পাঠিয়েছিল, বীর আলেকজাণ্ডার তুচ্ছ একটুখানি মদের পেয়ালার কাছে পরাভূত হলেন, আর আমাদের হনুমান রাবণের লঙ্কা দগ্ধ করলেন, কাঠবেরালি সমুদ্র বাধলেন, এতটুকু লাঙলের ফলায় অত বড়ো যদুবংশটা ধ্বংস হয়ে গেল। ঝোপ বুঝে কোপ মারতে পারলে টুনটুনিও হাতিকে সাবড়ে দিতে পারে, আর আমরা মানুষগুলোকে নির্বংশ করতে পারব না ? আর নিস্তার নেই, জগৎ-জোড়া মানবরাজত্ব এইবার শেষ হল দেখছি। দুরন্ত মানুষ বন সব কেটে কী অত্যাচার না করছে জন্তুদের উপরে! আমাদের ঘরছাড়া করছে, জঙ্গল জ্বালিয়ে দিচ্ছে, মাঠ সব চষে ফেলছে। নিজেদের ঘর ওঠাতে, ক্ষেত বসাতে, গলিজ শহর ওঠাতে, রেলগাড়ি চালাতে, চুলে ধরাতে, গোরূপা পৃথিবী— যিনি জীবজন্তু সবার মায়ের তুল্য, তারও বুকে শাবল আর কোদাল বসাতে মানুষ একটুও ইতস্তত করছে না, আর নিজের গায়ের শক্তি বাড়াবে বলে মানুষ ঘাড় মুটকে পুড়িয়ে ঝলসে Wobr>
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।