রানী তখন দু’হাতে আটগাছা চুড়ি পরলেন; মানিকের চুড়ি রানীর হাতে ঢিলে হল, হাতের চুড়ি কাঁধে উঠল।
রানী তখন দু’পায়ে দশ-গাছা মল পরলেন; রাঙা পায়ে সোনার মল আল্গা হল, দু’পা যেতে দশ গাছা মল শানের উপর খসে পড়ল। রানী মুখ ভার করে মুক্তোর হার গলায় পরলেন; মুক্তোর দেশের মুক্তোর হার রানীর গলায় খাটো হল, হার পরতে গলার মাস কেটে গেল। রানী ব্যথা পেলেন।
সাত-পুরু করে শখের শাড়ি অঙ্গে পরলেন; নীল রেশমের নীল শাড়ি হাতে বহরে কম পড়ল। রানীর চোখে জল এল।
তখন মানিনী ছোটোরানী আট হাজার মানিকের আটগাছা চুড়ি খুলে ফেলে, নিরেট সোনার দশগাছা মল পায়ে ঠেলে, মুক্তোর মালা শখের শাড়ি ধুলোয় ফেলে বললেন— ছাই গহনা! ছাই এ শাড়ি! কোন্ পথের কাঁকর কুড়িয়ে এ চুড়ি গড়ালে? মহারাজ, কোন্ দেশের ধুলো বালিতে এ মল গড়ালে? ছি ছি, এ কার বাসি মুক্তোর বাসি হার! এ কোন্ রাজকন্যার পরা শাড়ি! দেখলে যে ঘৃণা আসে, পরতে যে লজ্জা হয়! নিয়ে যাও মহারাজ, এ পরা শাড়ি পরা-গহনায় আমার কাজ নেই।
রানী অভিমানে গোসা-ঘরে খিল দিলেন। আর রাজা মলিনমুখে সাত জাহাজ সোনা দিয়ে কেনা সেই সাধের গহনা, শখের শাড়ি নিয়ে রাজসভায় এলেন।
রাজমন্ত্রী রাজসিংহাসনের এক পাশে, রাজ্যের মাঠ-ঘাট দোকানপাট সন্ধান করে, যাদুকরের দেশের এক বণিকের জাহাজ থেকে, কানা-কড়ি দিয়ে একটি বাঁদরছানা কিনে বসে আছেন।
রাজা এসে বললেন— মন্ত্রীবর, আশ্চর্য হলুম! মাপ দিয়ে ছোটোরানীর গায়ের গহনা, পরনের শাড়ি আনলুম, সে শাড়ি, সে গহনা, রানীর গায়ে হল না!
তখন সেই বনের বানর রাজার পায়ে প্রণাম করে বললে—বড়ো ভাগ্যবতী পুণ্যবতী না হলে দেবকন্যের হাতে বোনা, নাগকন্যের হাতে
২৯