থেকে-থেকে রাগ করে গা-ঝাড়া দেয়— লোকে তার মনের কথা বোঝে না, তামাসা দেখে হাসে, হাততালি দেয়। আজব শহরের মানুষ তারা কেউ বোঝে না মলয় দ্বীপের পাখির কী দুঃখ । তার হঃখুটা বোঝে শুধু ভোরের আলে। সে কোনোদিন কুয়াস সরিয়ে কারখানা-ঘরের কোণটিতে এসে দেখা দেয়, সবুজ পাখির গায়ে হাত বোলায়। ভয়ে-ভয়ে আসে আলো, ভয়ে-ভয়ে সরে যায়। পাখি বলে— ‘যদি কোনোদিন সিন্ধু-পারে যাও হে আলো, তবে ভুলো না, মলয় দ্বীপের সবুজ ঘরে আমার খবর পৌছে দিয়ে ; বোলো আমি বেঁচে মরে আছি!’ আলো বলে— ‘যেদিন আমি বড়ো হয়ে উঠব সেদিন নিশ্চয় নিশ্চয় তোমার কথা তোমার আপনার লোকের কাছে জানিয়ে আসিব ।” শীত কাটল, পরিষ্কার হল দিনে দিনে আকাশ, আলোর তেজ বেড়েই চলল। আর সে ভয়ে-ভয়ে আসে না ; অন্ধকারের ঘরে আসে রানীর মতো চারিদিক আলো করে, কারখানার কলকজা ঝক ঝক করতে থাকে আলো পেয়ে । পাখি আলো-মাখা ডানা কঁাপিয়ে বলে – ‘আর কেন, এইবাৰ ’ আলো বলে— ‘থাকো থাকে, আজ রাতের শেষে খবর পাবে!’ খাচার পাখি ছটফট করে— সকাল কখন হয় তারই আশায় । সেদিন ভোরের বেলায় কলের খাচায় ধরা ক্লান্ত পাখি ঘুমিয়ে গেল— সেই সময় কলখানার বাশি ডাক দিল কুলিদে: ; পাখির কাছে আলো এসে বললে চুপি চুপি— ‘মলয় দ্বীপে গিয়েছিলেম, তাদের তোমার দুঃখের খবর দিলেম ? পখি ঘুমন্ত চোখ একটু খুলে শুধোলো— ‘তারা কী বলে পাঠালে শুনি ? আলো খাচার মধ্যে এগিয়ে এসে বললে— ‘সবাই আহ করলে, কেবল একটি পাখি সে যেমন ছিল তেমনই রইল।” পাখি ঘাড় তুলে বললে— তার পর ? 8 o (t
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।