যাও যাও বলে মহারানী মাথায় ঘোমটা টেনে বললেন— আচ্ছা, না-হয় তোমারি মতো দেখতে ছিল চাদট, মিছে বোকো না, খেলতে দাও ! ধমক খেয়ে রাজা চুপ, রাজার কোলে নাতনী পিঠে নাতি কাঠের পুতুলের মতো স্থির, কিন্তু চোখ তাদের বলছে, গল্প বলে, গল্প বলে, আজা ভাই ! রাজা বেশিক্ষণ চুপ ক’রে থাকতে পারলেন না, শুরু করলেন— “তখন চাদ ছিল মস্ত, সুয্যি ছিল তার চেয়েও মস্ত, তালগাছ ছিল তার চেয়েও মস্ত আর রাজা রানী দুজন ছিল কিন্তু ভারি ছোট্টো, যেন পুতুল-খেলার রাজা ও রানী। একটা মস্ত আটচালা ঘরের এক কোণে ছিল তাদের একটা গোসাঘর, আর-এক কোণে ছিল খাজনা ঘর ; আর-দুটো কোণ, তার একটায় ছিল খাচায় ধরা পাখি, অন্ত কোণে ছিল একটি বীণা— সোনার তার বাধা বীণা ; সে যেন সোনার তারে ঘেরা পাখি । রাজার ভাব পাখির সঙ্গে আর রানীর ‘ভাব বীণার সঙ্গে ! রাজার পাখি রাঞ্জায় বলে – “এক দিন আমি চলব ” “বলি কোথায় চলবে?” পাখি বলে— “সে অনেক দূরে— ওই সে ও কোণে, যেখানে আর-এক পাখি ডাকাডাকি করে আমায় থেকে থেকে ” “বলি ওই অত দূর | পাখি, তুমি চলতে পারবে কি ? শক্ত মাটি বেদনা বাজবে পায়ে পায়ে চলার বেলায়।” পাখি তবু বলে চলব ! বলি কত আর ঠেকাই পাখিকে ! একদিন নিরালা ঘরে যে কোণে যা সব আছে ; কেবল রাজরানী ছুটিতেই নেই সেখানে। কেন নেই, তা এখন আর মনে পড়ে না। হয়তো বীণা বাজাত যে রাজার মেয়েট, সে গোসা-ঘরে খিল দিয়ে ছিল, হয়তো পাখি পুষেছিল যে রাজার ছেলে, সে আপনার খাজনা স্বরে বসে বসে কেবল গুণতে ছিল মোহর আর টাকা টাকা আর মোহব । সেই সময় পাখি থচ খুলে চলতে শুরু করলে— পায়ে পায়ে পায়ে এ কোণ থেকে ও কোণ। 8չե
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।