সেই তালগাছের ওপারে যে তেপান্তর মাঠ, তার ওপারে যে নদী, তারও ওপারে যাকে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে, তার কোণে যে রোদ সে দেয়ালা দিয়ে হেসে বললে— বলব না। তার পরেই আলোর চোখ চুলে পড়ল। সবাই এমন-কি গাছের পাতা, ফুল, পাখি, ঘাটে মাঠে হাটে যে যেখানে ছিল বলে উঠল, কোথায় গেল সে ? কোন দেশে ? গাছ আর মাঠ আর আকাশ আর বাতাসের মন ছোটো ছাওয়াকে খুজে যখন কোথাও পেলে না তখন তারা মুখ আঁধার করে ভাবতে লাগল— গেল কোথায়, এই ছিল ? তার পর সবাই ঘুমিয়ে গেল ঘরে বাইরে; শুধু তারাগুলো থেকে-থেকে দেয়াল করে চায় আর ভাবে গেল কোথায় ? গাছ ঘুমোয়, গাছের পাতা ঘুমোয়, মাঠ-ঘাট ঘুমোয়, মেঝেয় পড়ে কুঁড়ে মানুষ ঘুমোয়– সবাই স্বপন দেখে ছাওয়া তাদের বড়ো হয়েছে! সেই যে এতটুকখানি ছাওয়া— যে মাঠের শেষ দেখতে চাইত, পাখিদের সঙ্গে পাখি হয়ে উড়ে পালাতে চাইত আকাশের শেষে— সে এখন সেই-সব তেপান্তর মাঠের চেয়ে সেই নীল আকাশের চেয়ে বড়ো হয়ে গেছে । ভয়ে গাছ-পালা মাঠঘাটের গা ঝিম্ ঝিম্ করতে থাকে আর একবার চমকে উঠে তারা স্বপন দেখে, দেয়াল করে, হাসে, র্কাদে, চায় আর ঘুমোয়। অন্ধকারের মধ্যে নিঃশব্দে সাৎরে চলে একটার পর একটা বাছুর ছাওয়াকে খুজতে-খুজতে দূর-দূর দেশে ! সেই সময় চুপি-চুপি আলো আসে— একটুখানি চাদের আলো— বাতাসের গায়ে আলো পড়ে, গাছের শিয়রে আলো পড়ে, ঘুমের ঘোরে সবাই বলে— ছাওয়া ? ঘুম-ভাঙানো পাখি ডেকে বলে— ওই যে আলো, ওই যে ছাওয়া ! চমকে উঠে গাছ দেখে ছাওয়া ! ছাওয়া বলে— তার পর ? গাছ বলে– ধুধু করছে মাঠ তার মাঝে একটি গাছ পাহার দিচ্ছে – চুপ করে দাড়িয়ে । ছাওয়া বলে— দেখ-না ভাই ভালো করে তার পরে কী ? 88 o
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।