চলন নজর করে দেখে নিলেম । আমি দেখেছি পাখিদের আনন্দ শুধু খাওয়ায়-দাওয়ায় নয়। বাবুই হোন চড়াই হোন সবার জীবনের একটা বড়ো দিক আছে। এমনি নানা দিকে নানা বিষয়ে নজর দিতে দিতে ক্রমে পক্ষীসমাজের মধ্যে আমি একজন মাতববর হয়ে উঠলেম । দিনের মধ্যে বেশি সময় আমি ময়দানের একটা পিতলের স্বৰ্গীয় অতিমানুষের মূর্তির উচু মাথার টাকটার মাঝখানে বসে উস্কোখুস্কো পালকের মধ্যে মাথা গুজে পৃথিবীর দিকের চোখটা বন্ধ করে আর আকাশের দিকের চোখট খুলে রেখে পক্ষীসমাজের ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান কী ব্যবস্থা হতে পারে, কী বা এ সমাজের কাজ, আর কোথায় বা আমাদের শক্তি সে বিষয়ে চিন্তা করতেম। গভীর সমস্তা আমার মনে উদয় হত । বাবুই আর চড়াইয়েরা কোথা থেকে এল কোথায় বা যাবে, কেনই বা দুঃখু হলে তার কাদে না, কেনই বা তারা কাকদের মতো দল বেঁধে থাকে না, আর কেনই বা বাবুই আর চড়াই বাজে কিচিমিচি ঝগড়াঝাটি না করে পঞ্চায়েৎ করে সমাজের সব সমস্যা মিটমাট না করে নেয় ! দেখা যাচ্ছে শহরে ভারি অদলবদল হচ্ছে। যেখানে ছিল বাগান, সেখানে উঠছে বাড়ি, কাজেই শহরের যত বাবুই আর চড়াই তাদের ফিড়িং ফড়িং পোকা ও মাকড় এমনি সব নানা খাবার জিনিসের ক্রমেই অভাব ঘটছে। এর ফলে মানুষদের মধ্যে বড়োলোক আর গরিবের দুটো আলাদা থাক আর সঙ্গে সঙ্গে উচু নিচু একটা জাতেরও ছিষ্টি হয়ে উঠছে। শুধু যে মানুষের মধ্যে এমন হচ্ছে তা নয়, পাখিদের মধ্যেও গরিব-গুর্বে বস্তির পাখিগুলো ছাই-পাশ তাও আধপেট খেয়ে মরছে আর বড়োলোকদের পাড়ার পাখিগুলো ভালো খাওয়া পেয়ে খুবই আরামে রয়েছে। গির্জে, হাইকোর্ট, মনুমেণ্ট, টেলিগ্রাফ, পোস্ট আপিস, গোলদিঘির টোল, কলেজ ইষ্ট্রটের গোলামখানা, হোটেল, হাসপাতাল, এমনি সব বড়ো-বড়ো বাড়ির চুড়োয় বাসা বেঁধে মুখে আছে উচ্চে তারা। মানুষদের রাজত্বেও এই উচু-নিচু থাক-বেথাকের স্বষ্টি হয়ে পড়লে ক্রমশ ভারি গোলমাল 88bア
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।