পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরি, তোমাদের কি ভুলতে পারি? এই দেখ, তোমার জন্যে যতন করে মুগের নাড়ু, ক্ষীরের ছাচ, মতিচুর মেঠাই এনেছি।

 রানী দেখলেন, বুড়ি ব্রাহ্মণী বড়ো যত্ন করে, থালা সাজিয়ে সামগ্রী এনেছে। খুশি হয়ে তার দুহাতে দুমুঠো মোহর দিয়ে বিদায় করলেন, ব্রাহ্মণী হাসতে হাসতে চলে গেল।

 রানী ক্ষীরের ছাচ ভেঙে খেলেন, জিবের স্বাদ গেল। মুগের নাড়ু মুখে দিলেন, গলা কাঠ হল। মতিচুর মেঠাই খেলেন, বুক যেন জ্বলে গেল। বানরকে ডেকে বললেন— ব্রাহ্মণী আমায় কী খাওয়ালে! গা-কেমন করছে, বুঝি আর বাঁচব না।

 বানর বললে— চল্ মা, খাটে শুবি, অসুখ সারবে।

  রানী উঠে দাঁড়ালেন, সাপের বিষ মাথায় উঠল। রানী চোখে আঁধার দেখলেন, মাথা টলে গেল, সোনার প্রতিমা শানের উপর ঘুরে পড়লেন।

 বানর রানীর মাথা কোলে নিলে, হাত ধরে নাড়ি দেখলে, চোখের পাতা খুলে চোখ দেখলে— রানী অজ্ঞান, অসাড়!

 বানর সোনার প্রতিমা বড়োরানীকে সোনার খাটে শুইয়ে দিয়ে ওষুধের সন্ধানে বনে ছুটে গেল। বন থেকে কে জানে কী লতাপাতা, কোন গাছের কী শিকড় এনে নতুন শিলে বেটে বড়োরানীকে খাওয়াতে লাগল।

 রাজবাড়িতে খবর গেল— বড়োরানী বিষ খেয়েছেন। রাজা উঠতে-পড়তে রানীর মহলে এলেন। রাজমন্ত্রী ছুটতে ছুটতে সঙ্গে এলেন। রাজবৈদ্য মন্তর আওড়াতে আওড়াতে তারপর এলেন। তারপর রাজার লোক-লস্কর, দাসী-বাঁদী যে যেখানে ছিল হাজির হল।

 বানর বললে— মহারাজ, এত লোক কেন এনেছ? আমি মাকে ওষুধ দিয়েছি, মা আমার ভালো আছেন, একটু ঘুমোতে দাও। এত লোককে যেত বল।

 রাজা বিষের নাড়ু পরখ করিয়ে রাজবৈদ্যকে বিদায় করলেন।

৪০