ব্রাহ্মণ-কন্যা, গুর্জর দেশের বেদবিদ ব্রাহ্মণ দেবাদিত্যের একমাত্র কন্যা আমি, নাম সুভাগা ; বিয়ের রাতে বিধবা হয়েছি, সেই দোষে দুর্ভাগী বলে সকলে মিলে আমায় আমাদের দেশের বার করেছে। প্রভু, আমার মা ছিলেন, এখন মা-ও নেই, আমায় আশ্রয় দাও।” ব্রাহ্মণ বললেন— 'আরে অনাথিনী, এখানে কোন সুখের আশায় আশ্রয় চাস ? আমার অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, আমি যে নিতান্ত দরিদ্র, বন্ধুহীন ! ব্রাহ্মণ মনে-মনে এই কথা বললেন বটে, কিন্তু কে যেন তার মনের ভিতর বলতে লাগল—’হে দরিদ্র, হে বন্ধুহীন, এই বালিকাকে তোমার বন্ধু কর, আশ্রয় দাও । ব্রাহ্মণ একবার মনে করলেন আশ্রয় দিই ; আবার ভাবলেন— যে মন্দিরে আশি বৎসল ধরে এক এই সূর্যদেবের পূজা করলাম, তাজ শেয-দশায় আবার কার হাতে র্তার পূজার ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হই। ব্রাহ্মণ ইতস্তত করতে লাগলেন। তখন সহস সন্ধ্যাব সমস্ত অন্ধকাব ভেদ করে পৃথিবীর পশ্চিম পার থেকে একবিন্দু সূর্যের আলো সেই দুঃখিনী বালিকার মুখখানিতে এসে পড়ল। ভগবান আদিত্যদেব যেন নিজের হাতে দেখিয়ে দিলেন– এই আমার সেবাদাসী! হে আমার প্রিয় ভক্ত, এই বালিকাকে আশ্রয় দাও, যেন চিরদিন এই দুঃখিনী বিধবা আমার সেৰায় নিযুক্ত থাকে। ব্রাহ্মণ জোড়হস্তে সূর্যদেবকে প্রণাম করে, দেবাদিত্য ব্রাহ্মণের কন্যা সুভাগাকে সূর্যমন্দিরে আশ্রয় দিলেন । তারপরে কতদিন কেটে গেল, স্তভাগা তখন মন্দিরের সমস্ত কাজই শিখেছেন, কেবল ননীর মতো কোমল হাতে ত্রিশ সের ওজনের সেই আরতির প্রদীপটা কিছুতেই তুলতে পারলেন না বলে আরতির কাজটা বৃদ্ধকেই করতে হত। • একদিন শুভাগ দেখলেন, বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের জীর্ণ শরীর যেন ভেঙে পড়েছে— আরতির প্রদীপ শীর্ণ হাতে টলে পড়ছে। সেই দিন স্বভাগ। বল্লভপুরের বাজারে গিয়ে এক সের ওজনের একটি ছোটো প্রদীপ নিয়ে এসে বললেন– “পিতা, আজ সন্ধ্যার সময় এই প্রদীপে সূর্যদেবের আরতি করুন | ব্রাহ্মণ (t 8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।