একটু হেসে বললেন– সকালে যে প্রদীপে দেবতার আরতি আরম্ভ করেছি, সন্ধ্যাতেও সেই প্রদীপে দেবতার আরতি করা চাই ! নতুন প্রদীপ তুলে রাখ, কাল নতুন দিনে নতুন প্রদীপে সূর্যদেবের আরতি হবে। সেইদিন ঠিক দ্বিপ্রহরে সূর্যের আলোয় যখন সমস্ত পৃথিবী আলোময় হয়ে গেছে, সেই সময় ব্রাহ্মণ স্বভাগাকে সূর্যমন্ত্র শিক্ষা দিলেন– যে-মন্ত্রেব গুণে সূর্যদেব স্বযং এসে ভক্তকে দর্শন দেন, যে-মন্ত্র জীবনে একবাব ছাড়া দুইবার উচ্চারণে নিশ্চয় মৃত্যু। তারপর সন্ধিক্ষণে সন্ধ্যার অন্ধকারে অবতিশেষে নিভন্ত প্রদীপের মতো ব্রাহ্মণের জীবন-প্রদীপ ধীবে-ধীবে নিভে গেল— স্বর্যদেব সমস্ত পুথিবী অন্ধকার করে অস্ত গেলেন। সুভাগ একলা পড়লেন। প্রথম দিনকতক সুভাগ বৃদ্ধের জন্ত কেঁদে-কেঁদে কাটলেন । তারপর দিনকতক নিজের হাতে জঙ্গল পবিষ্কাল করে মন্দিরের চাবিদিকে ফলের গাছ, ফুলের গাছ লাগাতে কেটে গেল। আরও কতকদিন মন্দিরের পাথবের দেওয়াল মেজে-ঘষে পরিষ্কার করে তার গায়ে লতা, পাতা, ফুল, পাখি, হাতি, ঘোড়া, পুবাণ, ইতিহাসের পট লিখতে চলে গেল। শেষে স্থভাগাব হাতে তাব কোনো কাজ রইল না। তখন তিনি সেই ফলেব বাগানে, ফুলের মালঞ্চে এক-একাই ঘুবে বেড়াতেন। ক্রমে যখন সেই নতুন বাগানে দুটি-একটি ফল পাকতে আরম্ভ হল, দুটি-একটি ফুল ফুটতে লাগল, তখন ক্রমে দুএকটি ছোটো পাখি, গুটিকতক রঙিন প্রজাপতি, সই সঙ্গে একপাল ছোটে-বড়ো ছেলে-মেয়ে দেখা দিলে। প্রজাপতি শুধু একটুখানি ফুলের মধু খেয়ে সন্তুষ্ট ছিল, পাখি শুধু দু একট। পাক ফল ঠোকরাত মাত্র ; কিন্তু সেই ছেলেব পাল ফুল ছি ড়ে, ফল পেড়ে, ডাল ভেঙে চুরমার করত। স্থভাগা কিন্তু কৃাকেও কিছু বলতেন না, হাসিমুখে সকল উৎপাত সহ্য কবতেন। গাছের তলায় সবুজ ঘাসে নানা বঙের কাপড় পরে ছোটো-ছোটো ছেলে-মেয়ে খেলে বেড়াত, দেখতে দেখতে স্বভাগার দিনগুলো আনমনে কেটে যেত। ক্রমে বর্ষ এসে পড়ল – চারিদিকে কালো মেঘের ঘটা বিদ্যুতের ছট, আর গুরুগুরু গর্জন— সেই সময় @@
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।