কাচের সমান। তখন গায়েৰী 'ভাইরে !" বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তারপর সব শেষ, সব অন্ধকার । কতদিন চলে গেছে, গায়েব সেই সপ্তাশ্বরথে পৃথিবী ঘুরে দেশবিদেশ থেকে সৈন্ত্য সংগ্রহ করে রাজ্যের পর রাজ্য জয় করে, শেষে বল্লভপুরের রাজাকে সেই আদিত্যশিলা দিয়ে সম্মুখযুদ্ধে সংহার করে শিলাদিত্য নাম নিয়ে, রাজসিংহাসনে বসে, পাঠশালার সঙ্গীদের কাউকে মন্ত্রী কাউকে-বা সেনাপতি করে, যত নিষ্কর্ম বুড়ো কর্মচারীদের তাড়িয়ে দিলেন। তারপর হুলুধ্বনি শঙ্খধ্বনির মাঝখানে শিলাদিত্য চন্দ্রাবতী নগরেব রাজকন্যা পুষ্পবতীকে বিয়ে করে, শ্বেতপাথবের শয়নমন্দিরে বিশ্রাম করতে গেলেন । ক্রমে রাত্রি যখন গভীর হল, কোনো দিকে সাড়া শব্দ নেই, পায়ের ধারে চামবধারিণী চামর-হাতে ঢুলে পড়েছে, মাথার শিয়বে সোনার প্রদীপ নিভ-নিভ হয়েছে, সেই সময় শিলাদি ত্য তাব ছোটো বোন গায়েবীর কচি মুখখানি স্বপ্নে দেখলেন, র্তাব মনে হল যেন অনেক, অনেক দূর থেকে সেই মুখখানি তার দিকে চেয়ে আছে : আর সেই সূর্যমন্দিবের দিক থেকে কে যেন ডাকছে— ‘ভাইরে, ভাইরে, ভাইরে ? শিলাদিত্য চিৎকার কবে জেগে উঠলেন । তখন ভোর হয়েছে, তিনি তৎক্ষণাৎ রথে চড়ে সৈন্ত্যসামন্ত নিয়ে সূর্যমন্দিবে উপস্থিত হলেন ; দেখলেন ভীমের বর্ম-দুখানার মতো মন্দিরের খান কপাট একেবারে বন্ধ– কতকালের লতাপাত সেই মন্দিরের দুয়ার যেন লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছে। শিলাদিত্য নিজের হাতে সেই লতাপাত সরিয়ে মন্দিরের কুয়ার খুলে ফেললেন– দিনের আলো পেয়ে এক বাক বাছড় ঝটপট করে খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। শিলাদিত্য মন্দিরে প্রবেশ করলেন ; চেয়ে দেখলেন, যেখানে সূর্যদেবের মূর্তি ছিল সেখানে প্রকাও একখানা অন্ধকার কালো পর্দার মতো সমস্ত ঢেকে রেখেছে। শিলাদিত্য ডাকলেন—গায়েবী ! গায়েৰী ! কোথায় গায়েবী ? অন্ধকার থেকে উত্তর এল—‘হায় ৬২
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।